ধুলাবালির শহরে প্লাস্টিক ঘাস!

ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দি শহর। প্রাণহীন শহরকে সাজাতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এনেছে প্রাণহীন ঘাস। ধুলাবালির শহরে কোটি টাকা ব্যয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পিলারে লাগানো হয়েছে এই ঘাস। দেখলে মনে হয় সবুজ ঘাস। আসলে এটা প্লাস্টিক সিনথেটিক টার্ফ ঘাস।

এই ঘাস আনা হয়েছে সুদূর চীন থেকে। নিচে মাটিতে লাগানো রঙ-বেরঙের হরেক প্রজাতির ফুলের গাছ। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারকে সাজানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম স্কয়ারের মতো। ধুলাবালির এই শহরে প্লাস্টিক ঘাসে সজ্জিত ফ্লাইওভার যুক্তরাষ্ট্রের টাইম স্কয়ারের মতো কতটুকু পরিষ্কার রাখা যাবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে সচেতন মহলের।

- Advertisement -

নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, ফ্লাইওভারের পিলারে প্লাস্টিক ঘাস অপ্রয়োজনীয়। এত টাকা ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফ্লাইওভারকে সুন্দর করার ইচ্ছা থাকলে স্বল্প টাকা ব্যয়ে তা করা যেত। বরং ন্যাচারাল কিছু হলে তা আরো সুন্দর হতো।

- Advertisement -google news follower

সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়নি। নিচে রাস্তার অবস্থা বেহাল। বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে। ফ্লাইওভারে লাগানো হলো প্লাস্টিক ঘাস। কোটি টাকার প্লাস্টিক ঘাসগুলো ধুলাবালিতে সয়লাব। ময়লা জমে এগুলো কালো হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে কিছু শ্রমিককে ধুলাবালি পরিষ্কার করতে দেখা য়ায়।

প্রতিদিন দেখা যায়, কোনো না কোনো শ্রমিক ফ্লাইওভারের নিচে ঘাস পরিষ্কার করছে। তবে আইল্যান্ডের মাঝখানে বিভিন্ন চারা গাছ লাগানো হচ্ছে। শ্রমিকরা জয়নিউজকে বলেন, ঘাসগুলোতে এতো ধুলা জমে যে সহজে উঠে না। এগুলো পরিষ্কার করতে অনেক শ্রম দিতে হয়। তাছাড়া বারবার পরিষ্কারের পরও ধুলার কারণে ময়লা হয়ে যায় ঘাসগুলো।

- Advertisement -islamibank
ধুলাবালির শহরে প্লাস্টিক ঘাস!
আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পিলারে লাগানো প্লাস্টিকের ঘাস পরিষ্কারে ব্যস্ত শ্রমিক। ছবি: বাচ্চু বড়ুয়া

নগরের লালখানবাজার থেকে মুরাদপুর ফ্লাইওভার পর্যন্ত এই প্রাণহীন ঘাস বসাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা। প্রথম দফায় লালখান বাজার থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ৯৩টি পিলারে বসানো হচ্ছে সিনথেটিক টার্ফ। নিচের অংশে লাগানো হচ্ছে বাহারি ফুলের গাছ। আর তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

দর্শনার্থীরা জয়নিউজকে বলেন, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারকে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম স্কয়ারের মতো সাজানো হচ্ছে শুনে দেখতে এলাম। দেখতে ভালো লাগছে। কিন্তু এ শহরকে আমরা কতটুকু যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাখতে পারব। এখানে সর্বক্ষণ ধুলাবালির মধ্যে আমরা বেঁচে আছি। সেখানে কিভাবে এই ঘাসগুলো পরিষ্কার রাখা হবে।

তারা আরো বলেন, এত অর্থ ব্যয় না করে এখানে প্রাকৃতিকভাবে সবুজায়ন করা যেত। যদি পরিচর্যা না হয় তাহলে কোটি টাকার কৃত্রিম ঘাস নষ্ট হয়ে যাবে। যেমনটি হয়েছিল ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ফোয়ারাগুলো এখন অযত্নে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জয়নিউজকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদলে একটি এলাকা দৃশ্যমান করার স্বপ্ন ছিল। পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেইট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের টাইম স্কয়ারের মতো করে তোলার। যেখানে রাত-দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে মানুষ থাকবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই ব্যতিক্রমী এই আয়োজন। সেইসঙ্গে পিলারের গায়ে লাগানো হচ্ছে বর্ণিল বাতিও। মানুষ যাতে নতুন এক চট্টগ্রাম দেখতে পায় সেভাবেই ফ্লাইওভারের চারপাশ সাজানো হচ্ছে।

চউক’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, পুরো ফ্লাইওভারের নিচের অংশ সবুজায়নের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিটি পিলারে বসানো হচ্ছে সিনথেটিক টার্ফ। ফুলগাছ লাগিয়ে বাগানের রূপ দেওয়া হচ্ছে। সেই বাগানের মধ্য দিয়ে রাখা হচ্ছে হাঁটার পথ। বাগানের পাশে কেউ ইচ্ছে করলে যাতে বসতে পারেন, তার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দনিক করা হচ্ছে সড়ক ডিভাইডারের আইল্যান্ড।

উল্লেখ্য, চউক প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে।

জয়নিউজ/আরসি
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM