পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্রীরা রুখছে বাল্যবিবাহ

১৮ পেরুনোর আগে মেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার পক্ষে অনেক প্রচার হলেও গরিব দেশে সেসব ক’জন শোনেন! ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসার মীনা মঞ্চের ছাত্রীরা এবার নিজেরাই রুখছে বাল্যবিবাহ।

- Advertisement -

ইউনিসেফের কার্টুন চরিত্র মীনা দক্ষিণ এশিয়ায় তিন দশক ধরে দারুণ জনপ্রিয়। মীনার কাহিনি এখানকার মেয়েদের গল্পই তুলে ধরে। বছর পাঁচেক আগে সেই মীনার নামে মঞ্চ করেই একজোট হয় পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা ছাত্রীরা।

- Advertisement -google news follower

স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনা, এলাকার সমস্যা ও কুসংস্কার দূর করা, এমন প্রচুর কাজের পাশাপাশি এখন মীনা মঞ্চের ছাত্রীরা বাল্যবিবাহ রুখে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।

মুর্শিদাবাদ, মালদহ, ২৪ পরগনার পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি ও কলকাতার বিভিন্ন মাদ্রাসায় মীনা মঞ্চ হয়েছে। মাদ্রাসাপিছু ২০-৩০ জন ছাত্রী নিয়ে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে এই দল গঠন করা হয়।

- Advertisement -islamibank

ছাত্রীদের মধ্যে একজন নেতা থাকে। তার তদারকিতেই সব কাজ চলে। বছরে মীনা মঞ্চের ২-৩টি কর্মশালা হয়। ব্লকভিত্তিক বা জেলাভিত্তিক এই কর্মশালায় হাজির থাকেন ইউনিসেফের সদস্যরা।

পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে কমপক্ষে ২৫ জনের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে মীনা মঞ্চ। ২০১৭ সালে মালদহে ১৪ জন ও ২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনায় ২২ জনের বিয়ে রোখা সম্ভব হয়েছে।

কীভাবে বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া হয়? প্রমীলা বাহিনীর নেত্রী সান্তানুর জানান, বাল্যবিবাহের খবর পেলে মীনা মঞ্চের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করি প্রথমে। তারপর ছাত্রীটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে ওদের বাড়ি যাই। বোঝাই, এখন মিড ডে মিল, ইউনিফর্ম দেওয়া হচ্ছে, স্কলারশিপ বা কন্যাশ্রী রয়েছে। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে শারীরিকভাবে সমস্যায় পড়তে হয় ইত্যাদি।

তাছাড়া মীনা মঞ্চের মেয়েরা খুবই সক্রিয়। বিয়ের খবর ওরাই যোগাড় করে। এমনকি কোনো ছাত্রীর বাড়ির আশেপাশে ঘটক ঘোরাফেরা করতে দেখলেও তারা সন্দেহ শুরু করে।

বিয়ে না হলে ছাত্রীরা খুশিই হয়। মেয়েরা এখন শিক্ষার গুরুত্ব বুঝছে। অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার কুফল চোখের সামনে দেখে তারা আরো বেশি সচেতন হয়ে উঠেছে।

কোমনগর মাদ্রাসায় ফের যোগ দিয়েছে ১৬ বছরের দিলরুবা খাতুন। অক্টোবরের শুরুতে তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিয়ের আগের রাতে বাজারে যাওয়ার অছিলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিলরুবা মীনা মঞ্চের সদস্যদের গিয়ে জানায়, সে বিয়ে করতে চায় না, পড়তে চায়।

এরপর দল বেঁধে মঞ্চের মেয়েরা যায় দিলরুবার বাড়িতে। তার বাবাকে শেষমেশ মুচলেকা দিতে হয়।

ইউনিসেফের আধিকারিক অমৃতা সেনগুপ্ত বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলায় মীনা মঞ্চ কাজ করছে। আরেকটি জেলা যোগ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে আরও বেশি পড়ুয়াকে এই অভিযানে যুক্ত করা সম্ভব হবে।

মীনা মঞ্চকে আরো প্রসারিত করলে ভালো হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জয়নিউজ/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM