অবৈধ বালি উত্তোলনে বিপর্যয়ে শঙ্খ

শঙ্খ নদীর আনোয়ারা ও বাঁশখালী অংশের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। ৪৫টি নৌযানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিনই বালি উত্তোলন করা হচ্ছে এ নদী থেকে।

- Advertisement -

অবৈধ এ বালি উত্তোলনের ফলে শঙ্খ নদীর দুই পাড়ের শত শত বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ। বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের পূর্বদিকের অনেকটা অংশ এখন শঙ্খ নদীর গর্ভে প্রায় তলিয়ে গেছে।

- Advertisement -google news follower

অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের সামনেই দিনদুপুরে কোটি কোটি টাকার বালি তুলে নেওয়া হলেও তা কারো নজরে আসছে না। বালি উত্তোলনকারীরা প্রশাসনের অনুমতি থাকার কথা বললেও স্থানীয় প্রশাসন বলছে এ ধরনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।

শঙ্খের দুই পাড়ের গ্রামবাসী স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ দিলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে বালি উত্তোলনকারীরা নির্বিচারে বালি উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

- Advertisement -islamibank

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশখালীর খানখানাবাদ এলাকা থেকে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামের শঙ্খ নদীর মোহনা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৪৫টি নৌযানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে।

শঙ্খ নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় বাঁশখালীর পূর্ব পুকুরিয়া ও তেচ্ছিপাড়া গ্রামে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই গ্রামের বসতবাড়ি, লোকালয়, ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। প্রতিদিন ভাঙছে অসংখ্য বসতভিটা। ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়ে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে।

গত কয়েক বছরে দুই শতাধিক বসতবাড়ি, উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুকুরিয়া মখলেছিয়া এমদাদুল মাদ্রাসা, পশ্চিম পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, পশ্চিম পুকুরিয়া আইন উদ্দিন জামে মসজিদ ও পশ্চিম পুকুরিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

পুকুরিয়া ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ আহমদ জয়নিউজকে বলেন, শঙ্খ নদীতে নির্বিচারে বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে পুরো পুকুরিয়া ইউনিয়ন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) আব্দুর রাজ্জাক জয়নিউজকে বলেন, উত্তর পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শঙ্খ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন আমার বসতভিটায় স্কুলটির কার্যক্রম চলছে। শঙ্খ নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, অবৈধ বালি উত্তোলন শঙ্খ নদীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত বালিখেকোদের দমন করা।

পশ্চিম পুকুরিয়ার আহমদ কবির বাবুল নামে এক ব্যক্তি চলতি বছরের মার্চে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের কাছে ১০ জন বালি উত্তোলনকারীর নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। তাতে যাদের নামে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন শাহাদাত হোসেন, আমজাদ হোসেন, জসীম উদ্দিন, জোবাইর আহমদ, মো. বেলাল, নাজিম উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, মো. হামিদ ও মনির আহমদ। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জয়নিউজকে বলেন, পুকুরিয়া এলাকায় বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার যারা বালি উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবাইর আহমেদ জয়নিউজকে বলেন, শঙ্খ নদীতে বালি উত্তোলনের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শিগগিরই বালিখেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাঁশখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পোল্ডারের বাইরে হওয়ায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। পোল্ডারের বাইরে হলেও ১০ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা যদি হতো তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে একটি প্রকল্প হাতে নিতে পারতো। বিষয়টি এখন এলজিইডি তদারকি করবে। তাছাড়া অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করা স্থানীয় প্রশাসনের কাজ।

বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, পুকুরিয়া ইউনিয়নের দুর্ভোগের চিত্র কয়েক বছর আগে আমি নিজে ঘুরে দেখেছি এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

জয়নিউজ/বিশু/জুলফিকার
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM