প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহের কারণে দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন ব্যবসায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। কয়েক লাখ খেটে খাওয়া মানুষ বেকারত্বে ভুগছে। সরকার হারচ্ছে কোটি-কোটি টাকা।
দেশের বৃহৎ এই হ্রদের উপর নির্ভর করে চলছে মৎস্য ভাণ্ডার,পর্যটন শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য। আর এ কাজের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে কয়েক হাজার ছোট, বড় ব্যবসায়ী। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানি কয়েক বছরের তুলনায় সর্বাধিক হ্রাস পেয়েছে। এতে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। সচল আছে মাত্র ১টি ইউনিট। ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্থলে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট।
পানি কমে যাওয়ার ফলে কাপ্তাই উপজেলাসহ প্রায় ৬টি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারি কর্মকর্তা -কর্মচারীদেরকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে আবার কর্মস্থলে না পৌঁছাতে পারায় অনেককে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে হৃদের অনেক এলাকা বিশাল মাঠে পরিণত হয়েছে। দূরন্ত শিশুরা প্রতিনিয়ত সেখানে ফুটবল, ক্রিকেটসহ হরেক রকম খেলায় মেতে উঠেছে।
পানি শুন্যতার ফলে বিভিন্ন শিল্প-কলখারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারায় অতিকষ্টে দিন যাপন করছে।
বাঁশ ব্যবসায়ী আবুল হাসেম জয়নিউজকে জানান, দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর যাবত বাঁশ ব্যবসা করছি, কিন্ত এবছরের মত আর পানি কমতে কখনো দেখিনি। প্রতিনিয়ত পানি কমছে। বর্তমানে আমাদের ব্যবসা এখন শুন্যের কোটায়।
সাম্পান ও ইঞ্জিনচালিত বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ জয়নিউজকে জানান,পানি অতিদ্রুত কমে যাওয়ার ফলে লোকজনের যাতায়াত একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে পর্যটন শিল্পে ভাটা নেমেছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থাপক এটিএ আবদুজ্জাহের জানান, রুলকার্ভ অনুযায়ী বর্তমানে হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮.২২ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। কিন্তু সেখানে পানি রয়েছে ৭২.৪৫ এমএসএল। পানির উচ্চতা ৬৮ এমএসএলে নেমে গেলে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিটই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস পূর্বে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটি কাপ্তাই সফরকালে হ্রদকে ড্রেজিং করা হবে বলে প্রেস ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের জানান। হৃদে নব্যতা ফিরে আনতে এর বিকল্প নেই বলেও ওই কমিটি জানান। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও কমিটি মন্তব্য করেন।