দূষণমুক্তি মিলছে না হালদার

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন, বায়ুদূষণ রোধ করি’। প্রতিবছর এ দিবস এলে লেখালেখি, মিছিল-মিটিং, সভা-সেমিনার হয়। উদ্দেশ্য প্রকৃতির ভারসাম্য তথা পরিবেশ রক্ষা করা।

- Advertisement -

অথচ দূষণ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশের একমাত্র মিঠাপানির কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী। হালদা তার চিরচেনা রূপ প্রতিনিয়তই হারাচ্ছে। মা-মাছের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে প্রতিদিন কল-কারখানার বর্জ্য, নদীর তীরবর্তী চাষাবাদের জমিতে কীটনাশক ব্যবহারসহ নানা কারণে। ফলে হালদার ৭২ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৫টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

- Advertisement -google news follower

হালদা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শতাধিক শিল্প-কারখানা। আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার অধিবাসীদের বর্জ্য এবং পোলট্রি ফার্মসহ বিভিন্ন মিল-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি এসে পড়ছে হালদায়। তীরে চাষাবাদ করা জমিগুলোতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে তা এসে সরাসরি পড়ছে হালদায়। ফলে হালদা মা-মাছের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বিশেষায়িত এ নদী সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও, দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি হালদাপাড়ের মানুষের।

বন্ধ হচ্ছে না রাসায়নিকসহ হালদায় বর্জ্য নিক্ষেপ। হালদার হাটহাজারী অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি মুরগির খামারের বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। ফেলা হচ্ছে হাট-বাজারের জবাই করা পশুর নাড়িভুঁড়ি। আর বিভিন্ন খালের মাধ্যমে নদীতে এসে পড়ছে রাসায়নিক তরল বর্জ্য।

- Advertisement -islamibank

উপজেলার বুড়িশ্চর ও শিকারপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কৃষ্ণখালী খালের বর্জ্য খন্দকিয়া খাল হয়ে পড়ছে হালদা নদীতে। কৃষ্ণখালীর বিষাক্ত কালো পানি গোটা এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালের কারণে মশা-মাছির বংশ বিস্তার ঘটছে। এছাড়া রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সাকদা এলাকায় একটি ইটভাটার কবলে গেছে নদীর বিশাল অংশের মাটি।

তাছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ থেকে নারায়ণহাট পুরাতন ব্রিজ পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। নাজিরহাট বাজারের পশ্চিমপাশে হালদাপাড়ে গরু-ছাগল জবাইয়ের পর সেই বর্জ্যসহ বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে হালদায়। বাজারের পশ্চিমপাশে মাছ বাজার ও কাঁচাবাজারের ময়লা ফেলার নিরাপদ স্থান হচ্ছে হালদার পাড়। এ আবর্জনা পঁচে জোয়ারের সময় হালদার পানির সঙ্গে মিশে নদীর স্বচ্ছ পানিকে করছে বিষাক্ত।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নদী তীরবর্তী মানুষ ও মৎস্যজীবীরা বলেন, বিভিন্ন সময় কথার ফুলঝুরি নিয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তারা হালদা নদীতে স্পিডবোট নিয়ে নৌবিহারই করে গেছেন। যাওয়ার সময় নদীকে দূষণমুক্ত করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের কথা শুনিয়ে আশ্বস্তই করে গেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হালদা রক্ষায় বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণের কথা শোনা গেলেও, এখনো পর্যন্ত নদী নজরদারির জন্য কোনো নৌযান বা জনবল আসার খবর আমাদের কাছে নেই।

পরিবেশবিদরা মনে করেন, শিল্প-কারখানা প্রভৃতির বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় হালদায় ফেলার ফলে দিন দিন মাছের বসবাসের প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপÍ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হালদা মাছশূন্য হয়ে পড়বে। অথচ বিশেষায়িত এ নদী ও মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রায় একদশক ধরে নদীপাড়ের মানুষ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও হালদা রক্ষা কমিটির সঙ্গে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি আসেনি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, দূষণের কারণে মাছের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে হালদা। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। দূষণ রোধ করতে না পারলে একসময় মাছশূন্য হয়ে পড়বে হালদা।

তিনি জানান, পৃথিবীর কোথাও প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন কার্প জাতীয় মাছের জিন পাওয়া যায় না। হালদার কার্প বিলুপ্ত হলে পৃথিবী থেকেও আসল কার্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, বিশেষায়িত এই নদী রক্ষা ও দূষণমুক্ত করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। নদী দূষণকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা হালদার দূষণ রোধে ১১টি সুপারিশ করেছি। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে হালদা সংশ্লিষ্ট সব শিল্প-কারখানায় ইটিপি স্থাপন, হালদাকে পরিবেশগত বিপন্ন এলাকা ঘোষণা, হালদা নদী কমিশন গঠন ও হালদাকে জাতীয় নদী ঘোষণা করা প্রভৃতি।

জয়নিউজ/আরসি

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM