কর্মকর্তারা জলে, জেলেরা স্থলে

লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ‘মা ইলিশ’ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের ধরতে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রয়েছেন জলে। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞা মেনে ভবিষ্যতে বড় ইলিশ পাওয়ার আশায় জেলেরা রয়েছেন স্থলে। বেশিরভাগ জেলেই নিষেধাজ্ঞার এ সময়টুকু পার করছেন জাল মেরামত কিংবা জাল বুনে।

- Advertisement -

এদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পালের নেতৃত্বে মেঘনা নদীতে অভিযানে যান জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ৩৭ কিলোমিটার এলাকা অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময়ে মেঘনায় জেলেদের দেখা যায়নি। তারা কেউই আইন অমান্য করে মাছ ধরতে যায়নি।

- Advertisement -google news follower
কর্মকর্তারা জলে, জেলেরা স্থলে
মা ইলিশ রক্ষায় মেঘনা নদীতে অভিযান চালাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনায় ইলিশসহ সবধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার মেঘনা নদীর প্রায় একশ’ কিলোমিটার ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সবরকমের ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুদকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ আইন অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা কিংবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।

- Advertisement -islamibank

লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের সবাই মেঘনায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সরকারি হিসাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪২ হাজার।

এদিকে নিবন্ধিত জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তাদের এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। চরবংশী এলাকার মাছের আড়তদার জয়নাল আবদীন দেওয়ান জয়নিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা মাছের আড়ত গুটিয়ে রেখেছি। এই ২২ দিন জেলেরা যাতে নদীতে না যায় এবং বেচাকেনা যাতে বন্ধ থাকে সেজন্য নিষেধাজ্ঞার আগে

সচেতনতা সভায় আমি অঙ্গীকার করেছি। এখন আমি সময় পার করছি টিভিতে খেলা দেখে। আর জেলেরা সময় পার করছেন জাল মেরামত ও জাল বুনে।

রায়পুরের চরইন্দুরীয়া গ্রামের জেলে দেলোয়ার হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে সরকারি আইন মেনে তারা এক দিনের জন্যও নদীতে যাননি। দিনগুলো কষ্টের হলেও ২০ কেজি চাল পেয়ে তিনি খুশি। তার মতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে কেউই নদীতে যাননি।

রামগতি মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী মেজবাহ উদ্দিন জানান, গতবছর এ সময়ে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরতে গিয়ে জেল, জরিমানা ও অর্থদণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠেন নিষেধাজ্ঞার পর মেঘনায় বড় ইলিশ পেয়ে। এবারের নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা নদীতে জাল না ফেলে সচেতনতা দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে বড় ইলিশ পাওয়ার স্বপ্নে তারা নিষেধাজ্ঞার দিনগুলো পার করছেন। জেলেদের সঙ্গে তিনি নিজেও আপাতত মাছের ব্যবসা গুটিয়ে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন।

এদিকে রামগতির আলেকজান্ডারের মেঘনা তীরবর্তী চর গোসাই গ্রামের জেলে নিজাম জানান, বিগত বছরগুলোতে ধার-দেনায় চলছিল তার সংসার। এবার বড় ইলিশ বিক্রি করে বেশি লাভ হওয়ায় ধার-দেনা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রশাসনের কড়াকড়ির জন্য নয়, বড় ইলিশ ও বেশি ইলিশের আশায় নিষেধাজ্ঞার সময় এখন জেলেরা নদীতে যান না। তাই প্রশাসনের কর্মকর্তারা রামগতিতে কোনো জেলেকে আটক করতে পারেনি।

অভিন্ন কথা বলেন একই এলাকার জেলে ননী গোপাল, কারীমুল হকসহ বেশ কয়েকজন জেলে।

এদিকে সদর চর রমনী মোহন ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ জয়নিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রশাসন খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন নদীতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অভিযান চালানোয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাউকে মাছ ধরতে দেখা যায়নি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মহিব উল্যাহ বলেন, প্রজনন মৌসুমে ‘মা ইলিশ’ রক্ষায় লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এ এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য তাদের ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জলে, জেলেরা স্থলে
দিন-রাত সমানে মেঘনায় সতর্ক অবস্থানে প্রশাসন

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জয়নিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন ‘মা ইলিশ’ রক্ষায় চার শিফটে ৬ ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা মেঘনার জলে রয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। প্রশাসনের তৎপরতায় এখন নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা নদীতে না গিয়ে স্থলে রয়েছে। এর সুফল জেলেরা পাবে।

জয়নিউজ
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM