সেবা করার স্বপ্নই কাল হলো মহিউদ্দিনের

নগরের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ এলাকা বায়েজিদ-শেরশাহ। মূলত নিম্নআয়ের মানুষগুলোর বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর বাস শেরশাহতে। চাঁদাবাজি, আধিপত্যবিস্তার, সরকারি খাস জমি দখল, পাহাড় কাটা, ফুটপাত দখলসহ সব অপারাধের অভয়ারণ্য এই এলাকা। এখানে সামান্য ঘটনা থেকে ঘটছে হত্যাকাণ্ড।

- Advertisement -

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বায়েজিদ-শেরশাহ এলাকায় খুন হয়েছেন অন্তত নয়জন। গত এক বছর ধরে অশান্তি অবস্থা বিরাজ করছে শেলশাহ বায়েজিদে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলা।

- Advertisement -google news follower

তবে জনমনে প্রশ্ন জাগছে, হঠাৎ বায়েজিদ-শেরশাহ এলাকা অস্থির হলো কেন? অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে এসব ঘটনা ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন করার কথা ছিল যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদলের। কিন্তু বাদলের পরিবর্তে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ আহমদ চৌধুরী নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সাহেদ ইকবাল বাবুর কাছে হেরে যান। পরে খুন হন যুবলীগ নেতা মেহেদি হাসান বাদল।

- Advertisement -islamibank

নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চল তথা বায়েজিদে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারী বাদল মারা যাওয়ার পর হাল ধরেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা প্রকৌশলী আবু মো. মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম চৌধুরী। এছাড়া আবদুল কুদ্দুছ ওরফে কানা কুদ্দুছ ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিও এলাকা ও দেশ ছাড়া হন।

আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জালালাবাদ ওয়ার্ড থেকে আবু মো. মহিউদ্দিন কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করলে অশান্ত হতে থাকে বায়েজিদ-শেরশাহ এলাকা। মহিউদ্দিনকে কোণঠাসা করতে তার বিরুদ্ধে সব গ্রুপ একাট্টা হয়। সেই গ্রুপে যুক্ত হন বর্তমান কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু। মহিউদ্দিন, দিদার ও তার গ্রুপের ব্যাপারে নেতিবাচক তথ্য প্রচার করে মহিউদ্দিনকে তারা কিশোর গ্যাংয়ের ‘লিডার’ বানিয়ে দেয়। এমনকি এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে নামে-বেনামে চিঠি দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

এ অবস্থায় নিজেকে একটু আড়ালে সরিয়ে নেন মহিউদ্দিন। পরে তিনি নিজেকে ফের যুক্ত করেন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। এতেই গাত্রদাহ শুরু হয় ষড়যন্ত্রকারীদের। মহিউদ্দিনকে এলাকা ছাড়া করতে চলে নানা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা।

সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির ঘটনার প্রতিবাদ করায় খুন হন চটপটির দোকানদার রিপন। এ ঘটনার পর ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে হামলায় নেতৃত্ব দানকারী অপর আসামি এমদাদ বায়েজিদের মাঝেরঘোনা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

ওই বন্দুকযুদ্ধের পর থেকে শেরশাহ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর এলাকাছাড়া হন মহিউদ্দীন-দিদার।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে অপর গ্রুপ কুদ্দুস। রিপন মারা যাওয়ার পর কুদ্দুসের নেতৃত্বে শেরশাহ এলাকায় প্রকাশ্যে শোডাউন, মিটিং মিছিল করতে দেখা গেছে। কুদ্দুস শেরশাহের আরেক যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদল হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত আসামি। কুদ্দুসের বিরুদ্ধে এলাকায় গ্রুপিং, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বায়েজিদ থানায় অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে।

কুদ্দুসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেন তাঁর স্ত্রী। অভিযোগ অস্বীকার করে কুদ্দুসের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তার কোনোটিই সত্য নয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার স্বামীর সুনাম নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বন্দুকযুদ্ধে নিহত এমদাদের জানাজা শেষে কুদ্দুসের নেতৃত্বে এলাকায় শোডাউন করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার স্বামী বুঝতে পারেননি। আবেগের বশে তিনি শোডাউনে অংশ নেন। এর সঙ্গে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সুসংগঠিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কুদ্দুসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু। তিনি চান আসন্ন নির্বাচনে মহিউদ্দিন যাতে নির্বাচন করতে না পারে। এতে পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারবেন বাবু।

যোগাযোগ করা হলে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার জয়নিউজকে বলেন, রিপন হত্যার পর শেরশাহ এলাকার আইন-শৃঙ্খলার কোনো অবনতি হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নতুন করে কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইলে আমরাও প্রস্তুত রয়েছি। যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়নিউজ/এসআই
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM