চিকিৎসা চমেকে, টেস্ট বেসরকারি ল্যাবে!

চিকিৎসা। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। আর অসুস্থ হলে মানুষ ছুটে যায় হাসপাতালে। যাদের আর্থিক সার্মথ্য কম তাদের শেষ আশ্রয়স্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)। রাষ্ট্রীয় এই সেবা প্রতিষ্ঠান গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় নিবেদিত থাকার কথা থাকলেও এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের কাছে নীরবে সইতে হয নরক যন্ত্রনা।

- Advertisement -

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের গরিব ও অসহায় রোগীরা সংঘবদ্ধ  ২০ থেকে ২৫  দালাল চক্রের কাছে জিম্মি। আবার প্রতিটি চক্রে রয়েছে ৫ থেকে ৭ জন করে সক্রিয় সদস্য। মূলত জরুরি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, ব্লাডব্যাংক, বহির্বিভাগ এবং ওয়ার্ড ঘিরে গড়ে সক্রিয় এসব চক্র। ওষুধ কেনা, রোগ নির্ণয়,  প্রসূতি ওয়ার্ডের শিশুদের নানা সামগ্রী কেনার সময়ও দালালদের খপ্পরে পড়তে হয় সাধারণ রোগীদের। সঙ্গে বাড়তি যোগ হয় আয়া, ওয়ার্ডবয়দের অশোভন ব্যবহার

- Advertisement -google news follower

চমেক হাসপাতালকে কেন্দ্র করে চারপাশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অন্তত ৫০ টির বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল। বিভিন্ন পরীক্ষা বাবদ দালালদের মাধ্যমে ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলো রোগীদের কাছ থেকে প্রতিদিন নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নিজস্ব দালাল। এদের মূল কাজ হচ্ছে মেডিকেলের চিকিৎসকরা রোগীদের যেসব টেস্ট করাতে দেন সেগুলো মেডিকেলে না করিয়ে তাদের পছন্দমত বেসরকারি ল্যাবগুলোতে নিয়ে যওয়া। চমেকের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভাগিয়ে নেয় বেসিক ল্যাব, শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরী, প্রেসক্রিপশন, পপুলার ল্যাব, ল্যানসেট, চেকআপসহ বিভিন্ন ল্যাব।

হাসপাতালের তথ্যমতে প্রতিদিন প্রতিটি বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। যার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়। আবার রয়েছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের করতে হয় নানা পরীক্ষা। ল্যাবের মনোনীত দালালরা এ সুযোগ ব্যবহার করে ‘কম টাকায় পরীক্ষাগুলো করানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের ল্যাবে নিয়ে যান।

- Advertisement -islamibank
চিকিৎসা চমেকে, টেস্ট বেসরকারি ল্যাবে! | 20190719 195317 1
হাসপাতালের ৩য় তলার শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় দাড়ানো একটি বেসরকারি ল্যাবের দালাল

অনেকসময় একজন রোগীকে একাধিক ল্যাবের দালালরা ঘিরে ধরে। প্রত্যেকে নিজের ল্যাবে বিভিন্ন ছাড়ের লোভ দেখিয়ে রোগীদের আগ্রহী করে তুলে। রোগীরাও এত দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যান। একসময় টাকা বাঁচানোর আশায় অথবা অজ্ঞানতায় দালালের  ফাঁদে পা দেয়। পরে প্রতারিত হয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা গুনতে হয়। এসব ল্যাব থেকে করানো রির্পোট সঠিক কিনা তা নিয়েও অনেকসময় থাকে সংশয়। তখন রোগীকে আবারও নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়।

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে আসা তাহমিনা বেগম অভিযোগ করে জয়নিউজকে বলেন, আমার তিন বছরের ছেলেকে শিুশু ওর্য়াডের এনআইসিইউ (শিশুদের নিবির পরির্চযা কেন্দ্র)’তে ভর্তি করেছি।ডাক্তার এক্সরে, ব্লাড, ইউরিন টেস্ট করতে বলে। পরে আমরা হাসপাতালের ল্যাবে গেলে ল্যাব কর্তৃপক্ষ এক্সরে মেশিন নস্ট ও প্যাথলজিতে লোক নেই বলে ফিরিয়ে দেয়। তখন দুজন দালাল আমাকে ডেকে বলে, আপা অপনার টেস্ট গুলো করে দিতে পারব। আমার হাতে ভালো ল্যাব আছে। খুব বেশি টাকা দিতে হবে না। দুইজনই একইভাবে আমাকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করে। পরে দালালদের কারও কাছে না গিয়ে নিজের পছন্দমত একটি ল্যাব থেকে করে নিছি।

প্রতিবেদকের পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় ল্যানসেট ক্লিনিকের দালাল সুব্রত বড়ুয়ার সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, লানসেটসহ অশেপাশের অনেক ল্যাব থেকে টেস্ট করানো যাবে। ল্যাবে রোগীকেও আনতে হবে না। শুধু বাড়তি টাকা দিলেই হবে। এটাকে বলা হয় ‘সেবা র্সাভিস’। যেসকল রোগীরা হাটা-চলা করে ল্যাবে আসতে পারবে না শুধু তাদের জন্যই এই সেবা। সাধারণ একটি এক্সরের দাম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হলেও এই সেবা নিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হবে।

চিকিৎসা চমেকে, টেস্ট বেসরকারি ল্যাবে! | 20190720 195632 1
শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর ল্যাব টেস্ট বিলের রশিদ

অনুসন্ধানে জানা যায়, রোগীদের সেবা দিতে হাসপাতালের ভেতরে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, রেডিওলোজিসহ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। বিভাগ গুলোতে সরকার র্নিধরিত কম মূল্যে এক্স-রে, ইসিজি, এনজিওগ্রাম, এন্ডোসকপি, কোলনোসকপি, ব্লাড টেস্ট, সিবিসি টেস্ট,ইউরিন টেস্ট, এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ নানা পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু হাসপাতালে এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা জানে না আগত অনেক রোগীরা। ল্যাব টেকনিশিয়ানরাও রোগীদের বলেন না। ফলে সহজেই দালালরা রোগীদের প্রলুব্ধ করে পছন্দমত ল্যাবে ভাগিয়ে নেয়। দালালরা হাসপাতালের আয়া ওর্য়াডবয়দের সঙ্গে যোগসাজশ করে টেস্ট প্রতি হাতিয়ে নেয় ৩০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ মডিকেলে এসব টেস্ট করা হলে  দাম ভেদে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই হাজার টাকা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, হাসাপাতালে দালালের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি জানি। প্রায়সময় অভিযান করি। আমি সচেতন রোগীদের অনুরোধ করব কোনো রোগী যদি দালালের খপ্পরে পড়ে তাহলে তাকে যেন আটকে রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানানো হয়। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।

জয়নিউজ/কামরুল/পিডি

 

 

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM