নগরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত সপ্তাহে চারটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দুইটি ছিল ভয়াবহ। এ দুইটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ব্যাপক।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, শুষ্ক মৌসুম ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া ঘটনাস্থলের আশেপাশে প্রাকৃতিক জলাশয়ের অভাব, সরু রাস্তা, ঘনবসতি ইত্যাদি কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এ কারণে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা।
গত ১৬ জানুয়ারি বুধবার সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাটের আবদুল্লাহ ঘাটা এলাকায় তেলের ডিপোতে আগুন লাগে। ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
নগরীর ৫ স্টেশনের ২০টি গাড়ি আগুন নেভাতে কাজ করে। দাহ্য পদার্থ থাকায় ওই ডিপোতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এ ঘটনায় ডিপোর পাশের ৬টি বসতঘর পুড়ে যায়।
এ ঘটনার দুইদিন পর অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি বিকালে নগরীর এ কে খান মোড় এলাকায় আরএফএল কোম্পানির প্লাস্টিকের গুদামসহ আশেপাশের ৮টি গুদামে আগুন লাগে। গুদামগুলোতে প্লাস্টিক, বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ও তুলা থাকায় মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতা এত ভয়াবহ ছিল যে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিটের ১৭টি গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গুদামগুলোর আশেপাশে বড় কোনো জলাশয় না থাকায় শেষপর্যন্ত নালার পানি দিয়েও আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস।
এর পরদিন ১৯ জানুয়ারি নগরীতে দুইটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একটি ছিল পাঁচলাইশ ২নং রোডে গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসার সামনে ৩টি গ্যারেজে এবং আরেকটি দেওয়ানহাট এলাকায় একটি পোশাক কারখানায়। দুইটি ঘটনাই ঘটে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে।
এরমধ্যে গ্যারেজে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এবং গার্মেন্টসে সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এলাকাগুলোতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত না হওয়ায় এ দুই স্থানের আগুন নেভাতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
সর্বশেষ রোববার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে নগরের চকবাজার তেলপট্টি মোড়ে একটি লেপ-তোষকের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে যায় দেড় লাখ টাকার মালামাল। এখানেও অগ্নিকাণ্ডের কারণ ছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট।
এদিকে, নগরের এ কে খান মোড়ে আরএফএল এর প্লাস্টিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরদিন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মু. মাশহুদুল কবিরকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান। কমিটি সাতদিনের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেবে। তাই এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এ ঘটনায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।
হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড বাড়ার কারণ: শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
এ কে খান মোড়ে আরএফএল প্লাস্টিক কারখানায় আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিটের ১৭টি গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কিন্তু গুদামে প্লাস্টিক ও বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা পাশের একটি ছোট পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করে। এছাড়া নালা থেকেও তারা পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই গুদামের পাশে আগে চারটি বড় পুকুর ছিল। কিন্তু এখন আছে শুধু একটি। প্রভাবশালীরা পুকুরগুলো ভরাট করে ফেলেছে। সেগুলো থাকলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হয়ত কিছুটা সাহায্য পেত।
স্থানীয় মো. সেকান্দর জানান, পুকুরগুলো থাকলে হয়তো আরো আগে আগুন নেভানো যেত। তারপরও একটি পুকুরের পানি থেকে সাহায্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। নিরুপায় হয়ে নালা থেকেও তারা পানি নিয়েছে। এভাবে পুকুর ভরাট হতে থাকলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে তারা যদি একটু সচেতন হত তাহলে ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক হতো না। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। এসব কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট করা হচ্ছে। এগুলো থাকলে আগুন নেভানোর কাজে লাগে। এছাড়া নগরের অলি-গলিগুলো সরু হয়ে যাওয়াতে অনেক সময় আমাদের দুর্গত এলাকায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। এতেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকো ফ্রেন্ডস এর সাধারণ সম্পাদক নোমান উল্লাহ বাহার জয়নিউজকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নগরের অধিকাংশ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। ঘনবসতির কারণে কোথাও আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ফায়ার সার্ভিস ভোগান্তিতে পড়ছে। এসব বিষয়ের প্রতি এখনই নজর দেয়া উচিত।