ঠাণ্ডা মাথায়, নৃশংসভাবে খুনের জন্য পরিচিত ছিলেন অমিত মুহুরী। সেই অমিত এবার নিজেই খুন হয়েছেন নির্মমভাবে। তাও কারাগারে বন্দি অবস্থায়।
পরিচিত সেই প্রবাদবাক্য এই ঘটনায় আবার সামনে চলে এলো- ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’।
বুধবার (২৯ মে) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় খুন হন চট্টগ্রামের এই শীর্ষসন্ত্রাসী।
কারাগার সূত্রের তথ্য, অপর এক বন্দি রিপন ইট দিয়ে অমিতের মাথা ও শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর জখম করে।
পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন কারারক্ষীরা। রাত ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
কে এই অমিত মুহুরী?
যুবলীগের ক্যাডার অমিত মুহুরীর হাত ছিল রক্তে রঞ্জিত। নিজ দলের কর্মীসহ অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় জড়িয়ে আছে তার নাম।
চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অজিত মুহুরীর ছেলে অমিত মুহুরী। নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলেও কলেজের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ হয়ে ক্রমেই হয়ে ওঠেন ঠাণ্ডা মাথার পেশাদার খুনি।
অমিত যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবরের অনুসারী ছিলেন।
যেভাবে হয়ে ওঠেন ঠাণ্ডা মাথার খুনি
শুরুটা ২০১২ সালে। বন্ধু রাসেলকে নারীঘটিত বিষয়ে তুলে নিয়ে শরীরে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে অমিত মুহুরী। পরে এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রাসেলের মৃত্যু হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ২৪ জুন নগরের সিআরবিতে রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় খুন হয় শিশু মো. আরমান (৮) ও যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত (২৫)। সাজু পালিতের পরিবারের অভিযোগ, অমিত মুহুরীই সাজুর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে।
২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছিনকে দিনদুপুরে নগরের আমতলা এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অমিত মুহুরী জড়িত বলে দাবি সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের।
এরপরের ঘটনা আরো রোমহর্ষক। ঘটনা ২০১৭ সালের ১৩ আগস্টের। নগরের এনায়েতবাজার রানীরদিঘি এলাকা থেকে একটি ড্রাম উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে বোমা রয়েছে ভাবা হলেও ড্রাম কেটে ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ইমরান নামে এক যুবলীগ কর্মীর মরদেহ।
তদন্তে বেরিয়ে আসে গা শিউরে ওঠা তথ্য। ছোটবেলা থেকেই অমিত-ইমরানের মধ্যে ছিল বন্ধুত্ব। দু’জনই একসঙ্গে করেছেন যুবলীগের রাজনীতি।
কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে কথিত পরকীয়ার সন্দেহে সেই বন্ধুকেই নির্মমভাবে হত্যা করে ড্রামে সিমেন্ট ঢালাই করে রাখে অমিত। পরে নিজের বাসায় ইমরানের মরদেহ বাথরুমে রেখে সারারাত স্ত্রী-বন্ধু নিয়ে গান শোনেন অমিত মুহুরী।
২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ইমরান হত্যা মামলায় কারাগারে ছিলেন অমিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৫টি মামলা রয়েছে।