ধরুন, ইচ্ছে হলো প্রিয় নগরের প্রিয় আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় একটা গান শুনবেন। ইউটিউবে সার্চও দিলেন।
তৈরি থাকুন, আপনার জন্য ‘চমক’ অপেক্ষা করছে!
প্রথমদিকেই পর্দায় আসতে পারে ‘সেক্সি মাইয়া’!
ঠিক পড়েছেন। বন্দরনগরের আঞ্চলিক গানের বাজার এখন এমন অশালীন সব গানের ‘উপদ্রবে’ রমরমা।
শুধু গান? আঞ্চলিক নাটক থেকে শুরু করে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, সর্বত্র এখন অশ্লীলতার ছড়াছড়ি।
ভালো কাজ হচ্ছে না এমন নয়, তবে আঞ্চলিকতার মোড়কে সিংহভাগ বিনোদনেই এখন প্রধান উপকরণ অশ্লীলতা। এরসঙ্গে যুক্ত করুন উদ্ভট সব সংলাপ, দুর্বল চিত্রনাট্য, সস্তা ভাঁড়ামো আর বিচিত্র অঙ্গভঙ্গির সব নাচ। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে আঞ্চলিকতার নামে চলছে চটুল বিনোদনের ছড়াছড়ি।
সম্প্রতি ইউটিউবে অবমুক্ত বেশ কয়েকটি নাটক ও গানে দেখা মিলল বিনোদনের নামে এমন বিচিত্র সব আয়োজনের।
প্রথমেই আসা যাক, “এই দেহ” শিরোনামের গানটি প্রসঙ্গে। গানটির সুর খুব জনপ্রিয় একটি হিন্দী গানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। আবার গানটিতে নায়িকার পোশাক ও নাচের নামে অশালীন অঙ্গভঙ্গি সমালোচনার খোরাক যোগায়।
“বন্ধুরে তোর প্রেম” গানটিতেও নায়িকার পোশাকের সঙ্গে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির যুগলবন্দী যেকোনো সচেতন সংস্কৃতিপ্রেমিকে ক্ষুব্ধ করে তুলবে।
এমন আরো কিছু গান ও নাটক রয়েছে যেখানে অশ্লীলতার দৃষ্টিকটু প্রয়োগ হয়েছে। নগরের সংস্কৃতিকর্মীদের এ নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারা চান, সংস্কৃতিতে আঞ্চলিকতার চর্চা হোক, তবে তা অবশ্যই সুস্থ ও অর্থবহ হতে হবে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাশেদ হাসান জয়নিউজকে বলেন, যেসব ব্যক্তি বা সংগঠন অশ্লীল নাটক-থিয়েটার নিয়ে কাজ করছে তাদের রুচি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়। নগরের সাংস্কৃতিক জগৎ থেকে তাদের বয়কট করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চটক ও চাকচিক্য প্রাধান্য দিয়ে নাটক তৈরি করে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করা যায়। তবে এমন নাটকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে না। এসব চটুল নাটক-থিয়েটার যদি বেশি বিস্তার লাভ করে তাহলে আমাদের সংষ্কৃতি চিরায়ত ঐতিহ্য হারাবে।
নাট্যকার অ্যাডভোকেট দীপক চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, যারা পুঁজি খাটান তারা চেষ্টা করেন যেকোনো মূল্যে টাকা তুলে আনতে। অর্থমুখী সংস্কৃতিতে এ ধরনের অপসংস্কৃতির চর্চা খুব স্বাভাবিক। তারা সংস্কৃতিকে এখন ভোগ্যপণ্যের মতো বিকিকিনির সামগ্রীতে পরিণত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ভালো এবং রুচিশীল আঞ্চলিক নাটক অনেক কমে গেছে। তার কারণ এই অশ্লীলতা। যারা এ ধরনের নাটক বানায় তারা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব নাটক বানায়। যেহেতু এসব নাটক সমাজবিরোধী, তাই জনগণকে এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।