নগরে বইছে নির্বাচনি আমেজ। সব দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেমে পড়েছেন মাঠে। ব্যতিক্রম নন চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর- ডবলমুরিং-খুলশী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা একাদশ নির্বাচনের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন । ব্যানার-পোস্টার আর সভা-সেমিনারের মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতার কথা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামিও। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরবে-নীরবে উপস্থিত হয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। এ আসনে মূল লড়াই হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। তবে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আসনটিতে বিজয় অর্জন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৯ জন। যার মধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ভোট পেয়ে ২০০৮ সালে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের ডা. আফছারুল আমীন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৬ ভোট। তবে সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই আসন থেকে নির্বাচিত হন আফছারুল আমীন।
এইবার তিনি সহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদিক থেকে কিছু সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বিএনপি নেতা নোমান। একক প্রার্থী হিসেবে তিনিই হবেন এই আসনে বিএনপির কাণ্ডারী।
নৌকার মাঝি হতে চাওয়াদের মধ্যে আলোচনায় আছেন ডা. আফছারুল আমীন, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত এম এ আজিজের ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু, নগর যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ ও বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমদ মিন্টু । তবে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম। সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বিএনপির হয়ে সিটি নির্বাচনে জিতেছিলেন। পরে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে ছিলেন আড়ালে। এখন আবার নৌকায় সওয়ার হতে চাইছেন এই ব্যবসায়ী রাজনীতিক ।
নগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ওসমান খানও মাঠে আছেন বেশ জোরেশোরেই। জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী ছাড়াও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর মই মার্কা নিয়ে মাঠে আছেন বাসদ চট্টগ্রাম আহবায়ক মহীন উদ্দিন।
এ বিষয়ে ডা. আফছারুল আমীন এমপি জয়নিউজকে বলেন, আমার সময়ে এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বদলে গেছে এলাকার রাস্তাঘাট। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনেও নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমার এলাকায় কোনো দলীয় কোন্দল নেই। সবাই আমাকেই চায়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান জয়নিউজকে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সাত দফা এবং ১১ দফা সরকারের মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচন করব। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচনে না গেলে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। তবে বড় কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে যে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে তার বেশির ভাগই হয়েছে বিএনপির আমলে।
নোমান বলেন, আমি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য কাজ করি না। তাই দলমত নির্বিশেষ চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। এই সরকারের আমলে কেবল রুটিন উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে বিশেষ কোনো বরাদ্দ আদায় বা উন্নয়ন হয়নি।
মানুষ তাই আবারও তাকেই ভোট দেবে বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন মরহুম এমএ আজিজের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার। তিনি কাজে লাগাতে চান পিতার ভোট ব্যাংক। করতে চান এলাকার উন্নয়ন। আফছারুল আমীনের উপর দলের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী বাহার।
এ ব্যাপারে তিনি জয়নিউজকে বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী রাজনীতি করছি। আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। আমার বাবা এম এ আজিজ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। আমার পরিবার রাজনীতিসমৃদ্ধ পরিবার। তাই আমি রাজনীতিতে এসেছি।
আফছারুল আমীনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সাংসদরা এলাকায় গিয়ে কাজ করেন। কিন্তু আফছারুল আমীন সাধারণ কর্মীদের থেকে দূরে সরে গেছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর থেকে কোনো কার্যক্রমে হাজির হননি তিনি। দলীয় নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে গেছেন। তাছাড়া তিনি এলাকায় একটা গ্রুপ সৃষ্টি করে গেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু জয়নিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত দল। এই দলের যারা মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করছে তারাই সামনের দিনে দলকে নেতৃত্ব দেবে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এই যুবলীগ নেতা ছাত্রজীবনে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তারুণ্যকে প্রাধান্য দেবেন আগামী নির্বাচনে। এলাকায় সকল শ্রেণি-পেশার ও বয়সের মানুষের সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উন্নয়ন কাজের সাথে এলাকায় যুক্ত আছি। মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ জয়নিউজকে বলেন, আমি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন কাজ করছি। কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর কাছ থেকে। আমি রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সুখে-দুঃখে ছিলাম। এছাড়া এলাকায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছি। এসব কাজ করতে গিয়ে আমি সাধারণ মানুষের সাড়া পেয়েছি।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মঈনুদ্দিন আহমদ মিন্টু জয়নিউজ বলেন, আমি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছি। মানুষ আমাকেই পছন্দ করে। আশা করছি, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দিক, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।
নগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি ওসমান খান জয়নিউজকে বলেন, মহাজোট থেকে কি সিদ্ধান্ত হবে এখনো জানি না। তবে আমি ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে এ আসনে নির্বাচন করেছিলাম । তাই এ আসনের সবকিছু আমার জানা। আশাকরি দল আমাকেই মনোনয়ন দেব।
অপরদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ ইসহাক জয়নিউজকে বলেন, শাহজাহান চৌধুরী একাদশ নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচন করবেন। গ্রেফতার হওয়ার আগে একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি এলাকায় বিভিন্ন সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন । হালিশহর ও ডবলমুরিং থানা জামায়াতের বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি নিয়মিত অংশ নিয়েছেন । আশা করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় ও মাঠপর্যায়ের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্ধারণ করেছে জামায়াত। স্থানীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একেক এলাকায় একেক সংগঠনের নামে ভোটের মাঠে যাবে দল। জামায়াত পাঁচটি আসনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পাঁচটি আসন হল চট্টগ্রাম নগরে একটি, উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলায় দু’টি করে। নির্বাচনী হাওয়া ও জোটগত সিদ্ধান্তের উপর সবকিছু নির্ভর করছে।
তবে এ ব্যাপারে এ আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা জয়নিউজকে বলেন, জামায়াত যেহেতু এখন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, তাই নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর দলীয় নয়, ব্যক্তি পরিচয় থাকবে। আর দলীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে কি অবস্থা হয়, চট্টগ্রামে তার তো নজির রয়েছে।
বাসদ নেতা মহিন উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, নির্বাচন আন্দোলন এবং রাজনীতির একটা অংশ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক হলে আমরা তাতে অংশ নেব। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আলোচনার ভিত্তিতে বাসদ মই মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে।
জয়নিউজ/আরসি