দশ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে অন্তরীণ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান গুঞ্জন চলছে।
বিশেষ করে বেগম জিয়া প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এমন বক্তব্যে গুঞ্জনের মাত্রা ও গুরুত্ব বেড়েছে কয়েকগুণ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেগম জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে চলতি মাসের শুরুর থেকে। পশ্চিমা দুটি দেশের রাষ্ট্রদূতের বিশেষ উদ্যোগে সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এখন অনেকটাই শেষ পর্যায়ে। সবকিছু ঠিকমতো চললে এ মাসের শেষ দিকে কিংবা আগামী মাসের প্রথম দিকে এ বিষয়ে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচিত ৬ জনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় সুযোগ শেষ হবে ৩০ এপ্রিল। এ কারণে খালেদার মুক্তির বিষয়টি এগিয়ে আসছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিন- এটা খালেদা জিয়াও চান। তাই, সব কিছু দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়া বিদেশ গিয়ে কী করবেন, কতো দিন থাকবেন, কবে ফিরে আসবেন, সেখানে গিয়ে তিনি কোনো ধরনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন কি পারবেন না, সে বিষয়ে এখন বিশ্লেষণ চলছে। বেগম জিয়া মুক্তি নিয়ে সরাসরি তার গুলশানের বাসায় যেতে যান বলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু মুক্তি প্রক্রিয়ায় যারা যুক্ত তারা বেগম জিয়াকে বলেছেন কারাগার অথবা হাসপাতাল থেকে সরাসরি কঠোর নিরাপত্তায় তাকে লন্ডনের বিমান ধরতে হবে। বিমানবন্দরে তার সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকতে পারলেও কোন সভা কিংবা রাজনৈতিক বক্তব্য ও গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না।
মুক্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তদের এমন প্রস্তাবে বেগম জিয়া কিছুটা সময় নিয়েছেন। কারণ তিনি বলেছেন, তার অতীত মেডিকেল রিপোর্টসহ অন্যান্য সবকিছু তার বাসায় তারই তত্ত্বাবধানে আছে। সুতরাং সেগুলো নিতে হলে তাকে তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যেতে হবে।
শুধু তাই নয়, তিনি চান তার বিদেশযাত্রায় তার একান্ত গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে সঙ্গে নিতে। এ বিষয়ে তিনি নিজে একা চলাচল করতে পারেন না এই যুক্তিও দেখিয়েছেন। এ কারণে ফাতেমার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে তিনি সিদ্ধান্ত জানাতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জয়নিউজকে বলেন, বেগম জিয়া প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ যাবেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। বিদেশে যেতে হলে বেগম জিয়া জামিন নিয়ে যাবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নানান গুঞ্জন তিনিও শুনছেন।
বাস্তবে এ খবরের ভিত্তি নেই দাবি করে রিজভী বলেন, অন্যায়ভাবে বেগম জিয়াকে আটক রেখেছে সরকার। এ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তাই তারা নানান গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল-আলম হানিফ জয়নিউজকে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে সরকার জোর করে প্যারোলে মুক্তি দিবে কেন? এতে সরকারের কী লাভ আছে? তিনি বলেন, এটা অপপ্রচারের একটা কৌশল বিএনপির। সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়নি যে বেগম জিয়াকে জোর করে প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তার দল রাজনীতি করছে, যা কাম্য ছিল না। তিনি আরো বলেন, আদালতের কোন বিষয়ে মন্তব্য করবো না।
উল্লেখ, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের আরেকটি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে সাত বছর। যে মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন, সেটিতে গ্রেপ্তারের দেড় মাসের মাথায় জামিন মিললেও তার মুক্তির পথে বাঁধ সেধেছে আরও কমপক্ষে ৩৬টি মামলা। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। পরে সরকার পক্ষের আবেদনের উপর শুনানি করে কারাগারে থাকা অবস্থায় এই মামলায় হাইকোর্টে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর হয়। এরপর থেকে বিএনপি প্রধান কারাগারেই আছেন।