ভোর হতেই চট্টগ্রামে এ একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আলোচনার জন্ম দিল। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ কেজি ৪০০ গ্রাম স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কোথায় ছিলো এ স্বর্ণের গন্তব্য? বিমান থেকে উদ্ধার করা এ স্বর্ণের দাবিদার না থাকায় প্রশ্ন উঠেছে এটা কি কোনো সংঘবদ্ধ পাচারকারীর কাজ?
সোমবার (৮ এপ্রিল) আবুধাবি থেকে আসা বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট (বিজি ১২৮) বিমান থেকে ভোর সাড়ে ৭টার দিকে অভিযান চালিয়ে এসব স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।
বিমানবন্দর কর্মরত শুল্ক কর্মকর্তা (সুপার) ফজলুর রহমান বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জয়নিউজকে বলেন, বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণের পর কেবিন ক্রু বসার নির্ধারিত আসনের সঙ্গে লাগোয়া স্থান থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যেখানে ২০০টি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। বারগুলো কালো স্কচ টেপ দিয়ে মোড়ানো প্যাকেটের ভেতর স্ক্রু দিয়ে লাগানো ছিল। যা মোট ২৩ কেজি ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ। এগুলো ১০ কোটি টাকা মূল্যের।
বেনামি এ স্বর্ণে চোরাচালানের গন্তব্য কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহ আমানত বিমানবন্দরের কাস্টমস’র প্রাক্তন সুপার ও বর্তমানে কাস্টমস একাডেমিতে কর্মরত চৌকস অফিসার কাজল নন্দী জানান, মূলত আবুধাবি ও দুবাইয়ের ফিরতি বিমানে স্বর্ণ চোরাচালান বেশি হয়। এগুলো একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। যার সাথে তিনটি থানার লোকজন বিশেষভাবে যুক্ত। এগুলো হল রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি। আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে এ তিন থানার স্বর্ণচোরা চালানকারীরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণের বার পাচার কা দেশীয় বাজারে ও ভারতে পাচার করে।
বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার শর্ত কী? জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১২-তে এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই ২০১২ থেকে এ বিধিমালা কার্যকর করা হয়। একজন যাত্রী কী পরিমাণ স্বর্ণের অলংকার আনতে পারবেন?এই বিধিমালার আওতায় বিমানবন্দরে শুল্ক ও কর ধার্য করা হয়। বিধামালার ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী অনধিক ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২০০ গ্রাম রৌপ্যের অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির অধিক হবে না) সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করতে পারবে।’
অর্থাৎ বিদেশ থেকে আসার সময় একজন যাত্রী শুল্ক-কর ব্যতীত সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণ সঙ্গে আনতে পারবেন। তবে এক প্রকারের অলংকার ১২টির বেশি হতে পারবে না। ১০০ গ্রামের অতিরিক্ত আরো ১০০ গ্রাম পর্যন্ত অলংকার HS-Code (২০১৪-১৫) অনুযায়ী গ্রামপ্রতি ১৫০০ টাকা হারে শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে আনা যাবে। যে পরিমাণ স্বর্ণ বাংলাদেশে ঢুকছে, সে পরিমাণ স্বর্ণের চাহিদা নেই বাংলাদেশে। এর পরেও স্বর্ণ চোরাচালান আকস্মিক বেড়ে যাওয়া এবং বিপুল স্বর্ণ আটকের পর সব মহলে এখন প্রশ্ন- এত স্বর্ণ যায় কোথায়?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস ও গুল্ক গোয়েন্দাদের অসতর্কতা ও বিমানবন্দরের ভেতরে কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকায় স্বর্ণ চোরাচালানের ট্রানজিট হিসেবে এ বিমানবন্দর ব্যবহৃত হচ্ছে।