চলে গেলেন ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ডায়াবেটিস,- কোমরের আঘাত, গলব্লাডার স্টোন, অ্যাজমাসহ নানা জটিলতা নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি তিনি চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন ।
বিষয়টি জয়নিউজকে নিশ্চিত করে রমা চৌধুরীর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দীন খোকন বলেন, রোববার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে দিদির শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। ভোর ৪টার দিকে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
১৯৪১ সালে বোয়ালখালীর পোপাদিয়া গ্রামে রমা চৌধুরীর জন্ম। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা রমা দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ)।
উত্তাল একাত্তরের ১৩ মে ভোরে নিজ বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসরদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন রমা চৌধুরী। সম্ভ্রম হারানো রমা কোনোরকমে প্রাণে বেঁচেছিলেন পুকুরে নেমে। তবে হানাদাররা গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তাঁর ঘর।
এরপরও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি রমা চৌধুরী। শিক্ষক হিসেবে চলে তাঁর জীবন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর ২০ বছর তিনি লেখ্যবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেন। কোনোরকমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজের লেখা বই প্রকাশ করে তা ফেরি করে বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত তিনি ১৯টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর টানা চার বছর জুতো পড়েননি রমা চৌধুরী। এরপর নিকটজনের পীড়াপিড়িতে অনিয়মিতভাবে জুতো পড়া শুরু করলেও তৃতীয় সন্তান মারা যাওয়ার পর ফের জুতো পড়া ছেড়ে দেন। জুতো ছাড়াই ১৫ বছর ধরে পথ চলছেন রমা।
জয়নিউজ/আরসি