চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চালের চেয়ে গম আমদানি হচ্ছে বেশি। চালের উপর আমদানি মূল্যের ৪৪ শতাংশ শুল্ক আদায় করছে কাস্টমস। কিন্তু গমের উপর কোনো শুল্ক ধার্য নেই। যে কারণে বিপুল পরিমাণ গম আমদানি হলেও রাজস্বখাতে তা প্রভাব ফেলছে না।
এদিকে চালের উপর কর বাড়তি হওয়ায় এ খাদ্যপণ্য আমদানিতে অনিহা রয়েছে ব্যবসায়ীদের।
কাস্টমস কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান জয়নিউজকে বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। তবে সে তুলনায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। সাধারণত আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। চলতি অর্থবছরে চালের ওপর শুল্ককর বাড়ানোর ফলে চাল আমদানি গত অর্থবছরের তুলনায় কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা এখন চালের পরিবর্তে গম আমদানি করছেন। গমের ওপর কোন শুল্ককর নেই। শূন্য শুল্কের পণ্য আমদানি বাড়ায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে না। তাই চালের ওপর থেকে শুল্ককর কমিয়ে গমের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুলাই মাসে গম আমদানি হয়েছে ৫৩ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ কেজি। যার মূল্য ১ হাজার ১৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ১৩ হাজার ২২৩ দশমিক ৯৩ টাকা। কিন্তু এ খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোনো রাজস্ব পায়নি সরকার। অপরদিকে চাল আমদানি হয় ২০ লাখ ৯৮ হাজার ২৩৭ কেজি। যার মূল্য ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮০২ দশমিক ৮ টাকা। রাজস্ব আয় ১ কোটি ১১ লাখ ৫ হাজার ২৭৯ দশমিক ৫৩ টাকা।
আগস্ট মাসে গম আমদানি হয়েছে ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ কেজি। যার মূল্য ৩৯৩ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার ২২৩ দশমিক ২০ টাকা। যথারীতি রাজস্ব আয় শূন্য। চাল আমদানি হয় ৫ লাখ ৪১ হাজার ১৮০ কেজি। মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২৬ হাজার ২৯৫ দশমিক ৯৭ টাকা। রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৬ লাখ ৯২ হাজার ৯৫ দশমিক ৫৬ টাকা।
সেপ্টেম্বর মাসে ৪৬ কোটি ২০ লাখ ৬২ হাজার ৮২৫ কেজি গম আমদানি হয়েছে। যার মূল্য ১ হাজার ৯৩৬ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৯৭৭ দশমিক ৩৬ টাকা। কিন্তু রাজস্ব আদায় নেই এক টাকাও। অন্যদিকে ৪ লাখ ৩ হাজার ১৬ কেজি চাল আমদানি হয়। যার মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ২৬৪ দশমিক ৯৬ টাকা। রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৩৮ টাকা।
অক্টোবর মাসে গম আমদানির পরিমাণ ৬২ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার ৮৯৮ কেজি। যার আমদানি মূল্য ১ হাজার ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ১৩১ দশমিক ২৭ টাকা। কিন্তু কোনো রাজস্ব আদায় নেই। একই সময়ে চাল আমদানি হয় ৯ লাখ ৪ হাজার ৮০৬ কেজি। যার মূল্য ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫১ দশমিক ২২ টাকা। রাজস্ব আয় ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩৬ দশমিক ৯৫ টাকা।
২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর ছিল ১০ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯) শুল্ক কর আরো ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। যে কারণে বর্তমানে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ৪৪ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হয়।
২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জুলাই মাসে গম আমদানি হয়েছে ২২ কোটি ৮০ লাখ ৮৪ হাজার ১২৫ কেজি। যার মূল্য ৪৫১ কোটি ৬৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১৮ দশমিক ৯১ টাকা। এ খাতে সরকার এক টাকাও রাজস্ব পায়নি।
একই সময়ে চাল আমদানি হয় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৬ কেজি। যার মূল্য ১১০ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭২৬ দশমিক ৬১ টাকা। রাজস্ব আয় ১২ কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার ২২৭ দশমিক ২৯ টাকা।
আগস্ট মাসে গম আমদানি হয়েছে ৩১ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার কেজি। যার মূল্য ৬৫১ কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৫৮০ দশমিক ৪৫ টাকা। রাজস্ব আয়ের ঘর ছিল শূন্য। চাল আমদানি হয় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৬ দশমিক ২৪ কেজি। যার মূল্য ১০১ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৬ টাকা। রাজস্ব আয় ৫ কোটি ৯৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৭ দশমিক ৯৩ টাকা।
সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৪২ কেজি গম আমদানি হয়েছে। যার মূল্য ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৩ দশমিক ৫৫ টাকা। কিন্তু রাজস্ব ঘরে মিলে শূন্য। চাল আমদানি হয় ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫২৬ কেজি। যার মূল্য ২১৪ কোটি ৪২ লাখ ৫১ হাজার ৭৮০ টাকা। রাজস্ব আয় ৪ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৪২৪ দশমিক ৩৬ টাকা।
অক্টোবর মাসে গম আমদানির পরিমাণ ৭৯ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ২১৪ কেজি। আমদানি মূল্য ১ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬ দশমিক ১৯ টাকা। আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় শূন্য। চাল আমদানি হয় ৭ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪ দশমিক ৪ কেজি। মূল্য ২৪৩ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৬ টাকা। রাজস্ব আয় ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪১ হাজার ১৩০ দশমিক ৯৫ টাকা।
চট্টগ্রামের গম ব্যবসায়ীরা এ প্রসঙ্গে জয়নিউজকে বলেন, গম দিয়ে তৈরি হয় আটার রুটি, বিস্কুট, কুকিজ, কেক, পিঠা, পাস্তা, নুডলসসহ নানান রকম খাদ্যদ্রব্য। এগুলো সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। গমের ওপর শুল্ক কর না থাকায় গম দিয়ে খাদ্যদ্রব্যগুলোর দাম বর্তমানে কম রয়েছে। যে কারণে সকল শ্রেণীর ভোক্তাদের মধ্যে এসব খাদ্যের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে। কিন্তু গমের ওপর শুল্ক আরোপ করা হলে এই চাহিদা কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চাল আমদানির ওপর শুল্ক কর বেড়ে যাওয়াতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। কারণ দেশে চালের সংকট নেই। তবে গমের ওপর শুল্ক কর আরোপ করা হলে গম সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। গম জাতীয় দ্রব্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে।