তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। পুলিশের খাতায় তিনি একজন তালিকাভুক্ত ডাকাত সর্দার। ছিনতাই, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ- কোন অভিযোগটি নেই তার বিরুদ্ধে! সর্বশেষ দেশজুড়ে আলোচিত যুবলীগ নেতা দাউদ সম্রাট হত্যায় প্রধান আসামি হিসেবে আরেকবার সামনে আসে তার নামটি। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকার দুর্ধর্ষ এই ডাকাত সর্দারের নাম শহীদ ডাকাত। অভিযোগ রয়েছে তার পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন বড় রাজনীতিক থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও। আরো অভিযোগ রয়েছে, ১২ মামলার দায় মাথায় নিয়ে তিনি ঘোরেন প্রকাশ্যেই, তবে পুলিশ ‘খুঁজে’ পায় না তাকে!
সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকার কুখ্যাত এক ডাকাত দলের নাম শহীদ বাহিনী। এই ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি ছাড়াও অনেক অভিযোগ। তাদের দাপটে পৌরসভার চন্দ্রনাথ ধামের এই পাহাড়ি এলাকায় এখন হিন্দু ধর্মালম্বীদের পবিত্রস্থান চন্দ্রনাথ ধামে তীর্থ যাত্রীদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের ছত্রছায়ায় থাকে এ বাহিনী। একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। ফলে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে শহীদ বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সীতাকুণ্ড থানা সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড পৌর সদরের চন্দ্রনাথ ধাম, ভোলাগিরি ও প্রেমতলা এলাকাতেই মূলত শহীদুল ইসলাম প্রকাশ ডাকাত শহীদ বাহিনীর আনাগোণা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ডাকাত শহীদ ওই এলাকার গজারিয়া দিঘীর উত্তর পাড়ের আবুল মনছুরের ছেলে। পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত হলেও ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভার দত্তবাড়ি কেন্দ্রে ও সীতাকুণ্ড সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তার বাহিনীর মহড়া ছিল প্রকাশ্যে। ওই দিন পর্যন্ত ১১টি মামলা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাকে ধরেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সীতাকুণ্ডের এক পুলিশ কর্মকর্তা জয়নিউজকে বলেন, ডাকাত শহীদের বাহিনী যে কত বেপরোয়া তা যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু বলতে পারবেন। তিনি আরও জানান, গত তিন মাস আগে তার কয়েকজন আত্মীয় তীর্থভূমিতে এসে সর্বস্ব হারিয়েছেন। ঢাকা থেকে আসা এক উপ-সচিবের পরিবারের সদস্যদেরকেও সর্বস্ব হারিয়ে ফিরতে হয়েছে ঢাকায়। তবে তারা পুলিশের ঝামেলা এড়াতে কোনো মামলা করেননি।
সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে সীতাকুণ্ডের ভোলাগিরি দত্তবাড়ি স্কুলের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে খুন হন যুবলীগ নেতা দাউদ সম্রাট। হত্যার ঘটনায় তিনদিন পর মামলা দায়ের হলেও পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বুধবার (২ জানুয়ারি) রাতে সম্রাটের মা জেবুন্নেছা বেগম বাদী হয়ে শহীদুল ইসলাম প্রকাশ ডাকাত শহীদসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত একজনকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু গত পাঁচদিনেও এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মধ্যম মহাদেবপুর ভোলাগিরি মন্দির সড়কে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. দাউদ সম্রাটকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে ডাকাত শহীদ ও তার সহযোগীরা। এসময় আহত হন সাজ্জাদ, অমলসহ আরো কয়েকজন। সাজ্জাদের জখমও গুরুতর। নিহত সম্রাট ঐ এলাকার সাবেক আ’লীগ নেতা মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে।
এছাড়া শহীদের বিরুদ্ধে গত বছরের জুনে ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনায় সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং ৩৭)। ২০১৭ সালের মে মাসে একই অপরাধে আরও একটি মামলা হয় (মামলা নং ১৯)। এছাড়া একাধিক ডাকাতি, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে সীতাকুণ্ড থানায়। সর্বশেষ স্থানীয় যুবলীগ নেতা দাউদ সম্রাটকে প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় আবারও উঠে আসে শহীদ ও তার বাহিনী তান্ডবের চিত্র।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের ঘটনা নিয়মিতভাবে ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন মামলা হয় না। যা দুয়েকটি হয় প্রতিকার পাওয়া যায় না।
তার এই খুঁটির জোরের পেছনে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছায়া আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দাউদ সম্রাট হত্যার পর তার মা মামলা করলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কয়েকজনকে আসামি হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্রাট খুনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সীতাকুণ্ড থানার এসআই মো. আমির হামজা জয়নিউজকে বলেন, শহীদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের চারটি টিম কাজ করছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেন বলেন, শহীদুল ইসলাম পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত। তার বিরুদ্ধে দাউদ সম্রাট খুনসহ ১২টি মামলা রয়েছে। যেকোন সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।