নির্বাচনের পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতিতে নাখোশ বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট।
উভয় জোটের এ মনোভাব প্রকাশ পায় সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায়। নগরের ছয়টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও নগরের ছয়টি সংসদীয় আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল মান্নান।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে আমরা কাজ করছি।’ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সবাইকে নির্বাচনি আইন মেনে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।
এসময় নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের মহাজোট মনোনীত প্রার্থী মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকায় সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান।’
তবে এর আগে একই আসনের ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান অভিযোগ করেন, ১৪ ডিসেম্বর বোয়ালখালীতে নৌকা পোড়ানোর মামলা দিয়ে বোয়ালখালীর পৌর মেয়র, পৌর বিএনপি, উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হয়রানি চলছে। কাউকে ঘরবাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। নগরেও গায়েবি মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ঘরে থাকতে পারিনি। আমার স্থারব-অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার নির্বাচনি এলাকার নেতা-কর্মীরাও ঘরে থাকতে পারছে না। ১৬ ডিসেম্বর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিজয় দিবসের র্যালি আয়োজন করেছিলাম। সেই র্যালিতে হামলা হয়েছে। আমি জীবনঝুঁকিতে ছিলাম। আমাকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমার নির্বাচনি গণসংযোগে পুলিশ ভিডিও করছে। দিনে ভিডিও করে, আর রাতে নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে পুলিশ হানা দিচ্ছে। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হতে পারে না। প্রশাসন কেন কোনো দলের হয়ে কাজ করবে?
নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের আগে এজেন্টদের খালি বক্স ও নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যালেট পেপার গুনে দেখানোর প্রস্তাব করেন খসরু।
এদিকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফ এমপির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-১১ আসনে নির্বাচন আচরণবিধি কোনোভাবেই লংঘন হয়নি এবং হবে না বলে প্রশাসন ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন এম এ লতিফ।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের মহাজোট প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান। ভোটারদের মাঝে ইবিএম নিয়ে ভুল ধারণা আছে। ভুল ধারণা দূর করতে পদক্ষেপ নিতে তিনি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
একই আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি কারাগারে থাকায় তাঁর পক্ষে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার। তিনি ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপারও রাখার অনুরোধ জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই আসনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার নিরক্ষর ও বস্তিবাসী।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহীম বলেন, আমার থানার ওসিকে স্টেশনে পাওয়া যায় না। তিনি মন্ত্রীর সঙ্গে ব্যস্ত থাকেন।
এছাড়াও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা তাদের সমস্যা মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন। বিভাগীয় কমিশনার, নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।