‘আমাকে কিছু ভিক্ষা দেন। আমার বাবা অন্ধ।’
প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অন্ধ বাবাকে নিয়ে চলে আসছিল আইরিন আক্তারের ভিক্ষাবৃত্তি। সম্প্রতি স্কুলের পোশাক পরে বাবাকে নিয়ে ভিক্ষা করতে আসে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কার্যালয়ে। ভিক্ষার জন্য হাত পাতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুকের কাছে। স্কুলের পোশাক পরা মেয়েটিকে দেখে কৌতূহল জাগলো তার।
জিজ্ঞাসা করলেন, কেন ভিক্ষা করছ? জবাবে আইরিন জানায়, ‘আমার বাবা অন্ধ, তাই আমাকে ভিক্ষা করতে হয়।’
আরো জানায়, সে একসময় স্কুলে যেত। কিন্তু অভাবের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
আইরিনের বাবার নাম আবুল কাশেম। বাড়ি লোহাগাড়ার উজিরভিটার নোয়াপাড়া এলাকায়। তিনি জানালেন, তার চার মেয়ে। একটি মেয়েকে কোনোরকমে বিয়ে দিয়েছেন। চোখে দেখতে পান না বলে দিনমজুরের কাজও জোটে না। তাই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়ে কোনোরকমে দু’বেলার অন্নের সংস্থান হয়।
আবুল কাশেম আরো জানালেন, তিনি সরকারিভাবে প্রতিমাসে ৫শ’ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, ছোট্ট মেয়েটি স্কুলের পোশাক পরে ভিক্ষা করছে দেখে খুব খারাপ লেগেছে। চিন্তা করি, মেয়েটিকে কিভাবে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা যায়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে আলাপ করলে তিনিও ইতিবাচক সাড়া দেন।
লোহাগাড়া উজিরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, আইরিন এখন তার স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। তাকে বই ও শিক্ষা উপকরণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হয়েছে।
ইউএনও আবু আসলাম জানান, সরকার ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে আন্তরিক। আমরা আইরিনের লেখাপড়ার পাশাপাশি তার বাবার ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের জন্য ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় এনেছি। তাকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাউল দেওয়া হবে।
লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুচ্ছফা চৌধুরী বলেন, আইরিনের পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয় এবং তার বাবা যাতে আর ভিক্ষা না করেন, সে ব্যাপারে আরো সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
জয়নিউজ/আরসি