হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার যে আয়োজন করা হয় তা ইসলামী শরীয়ত সমর্থন করে না। কোন ঈমানদার মুসলমান মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলেন তিনি।
আল্লামা শফী বলেন, ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বর্তমানের যে বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরি হয়, তা ফসল রোপণ এবং কর আদায় সহজ করার উদ্দেশ্যেই করা হয়। আগে হালখাতা, পিঠা-পুলি বানানোর মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হত। এতে নতুন নতুন যেসব আয়োজন যোগ হচ্ছে তাতে যেমন ধর্মীয় বিধানাবলীর বিপরীতে অবস্থান নেওয়া হচ্ছে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতিও হুমকিতে পড়ছে। কারণ জাতীয়তার চেয়ে জাতিসত্ত্বার পরিচয় বড়। আর আমরা লক্ষ্য করছি এসব আয়োজনে ধীরে ধীরে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে। যা বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য কখনোই কল্যাণকর হবে না।
আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, মানুষের জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুই আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতাআলার হুকুমে হয়। পৃথিবীর সব বিশ্বাসীরা এটাই বিশ্বাস করেন। কোন মূর্তি, ভাস্কর্য, পোস্টার, ফেস্টুন ও মুখোশে মঙ্গল-অমঙ্গল থাকতে পারে না। বাঘ, কুমির, বানর, পেঁচা, কাকাতুয়া, ময়ূর, দোয়েলসহ বিভিন্ন পশু-পাখি মঙ্গল আনতে পারে না। এসব বিশ্বাস যেমন ইসলামী শরীয়তবিরোধী চেতনা, তেমনি এমন আধুনিক সময়ে মূর্তি-ভাস্কর্য ও জীবজন্তুর ছবিতে মঙ্গল-অমঙ্গল কামনা করা একটি কুসংস্কারচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণা।
আল্লামা শফী প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের সকালে বাদ্যযন্ত্রের তালে নানা ধরনের বাঁশ-কাগজের তৈরি মূর্তি, পেঁচার আকৃতি ও মুখোশ হাতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে মাত্র ২৮ বছর আগ থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা কীভাবে সার্বজনীন বাঙালি উৎসব ও সংস্কৃতি হতে পারে?
তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে আল্লামা শফী বলেন, তোমরা যারা আবেগের বশবর্তী হয়ে, ভুল ধারণায় প্ররোচিত হয়ে কিংবা বয়সের কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও গানবাদ্যের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করো, তারা নিজেদের বিরত রাখো। যৌবনকাল আল্লাহতাআলার প্রদত্ত সবচেয়ে বড় নেয়ামত। তোমাদের মূল্যবান সম্পদ ‘তারুণ্য’ যিনি দান করেছেন তাঁর ইবাদতে ও তাঁর সন্তুষ্টিতে তা কাজ লাগাও। জীবন সুন্দর হবে, আত্মিক প্রশান্তি লাভ করবে।
তিনি জনগণের উদ্দেশে আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে যেভাবে অগ্নিকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, ধর্ষণ ও পাচার বেড়ে চলছে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের উচিত মহান আল্লাহতাআলার কাছে তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাঁর ইবাদতে মগ্ন হওয়া। নিজেদের আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনে চেষ্টা-সাধনা করা। কারণ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পরিশুদ্ধতা ছাড়া শুধু মানবরচিত আইনের মাধ্যমে আল্লাহতাআলার গজব ও পাপাচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না।