জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মো এরশাদ একাধিকবার আমাকে দলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়াও আমাকে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার জন্য নানা প্রলোভন এবং হুমকি দিয়েছিলেন। এরশাদ সাহেব দলকে শক্তিশালী করার জন্য অন্য দলের মেধাবী নেতাকর্মীদের দলে নেওয়ার টার্গেট করেছিলেন। তার সেই টার্গেটে আমিও ছিলাম।
থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘দৃষ্টি আড্ডা সাথে নগরপিতা’ শীর্ষক আড্ডায় এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মেয়র বলেন, জাতীয় পার্টিতে যোগ দিলে আমাকে যা চাই তা দেওয়া হবে বলেও পার্টির চেয়ারম্যান প্রলোভন দিয়েছিলেন। আমি কিন্তু নিজের আদর্শে অবিচল ছিলাম। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। অবশ্য তাঁর আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ায় আমাকে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। আমি দমে যাইনি । বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া তো রীতিমত আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। হয় দলে আসতে হবে, নয়তো মৃত্যু পরোয়ানা। আমি আমার নীতি, আদর্শ ও সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম।
তিনি আরো জানান, আল্লাহর দোয়ায় আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে তিনবার ফিরে এসেছি। একবার সাম্পানে করে কর্ণফুলী পাড়ি দিয়ে বিএমডিসি যাচ্ছিলাম। সাম্পান থেকে আমার আগে দুইজন নেমে যান। আমি নামতে গিয়ে নদীতে পড়ে যাই। ভাগ্যিস পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমি পাশের জাহাজের নোঙর লাগানো দড়ি ধরে ঝুলে থাকি। নয়তো স্রোতের টানে হয়তো জাহাজের নিচেই সলিল সমাধি ঘটত আমার।
আরেকবার ট্রেনে কাটা পড়া থেকে বেঁচে যাই অলৌকিকভাবে। চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেনের লাইন ধরে হাঁটছি। কিন্তু অমনোযোগী থাকাতে ওই লাইন ধরে স্টেশনে আসা মেইল ট্রেনের হুইসেল আমি শুনতে পাইনি। আমার একটু দূরে থাকা পরিচিতরা আমাকে নাকি ডাকাডাকি করেছে অনেকবার। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আমি কারো ডাক শুনতে পাইনি। হঠাৎ করে ট্রেন ১৫-২০ ফুট দূরত্বে থাকা অবস্থায় কানে লাগে ‘ ট্রেন’ বলে একটি শব্দ। আমি দৌঁড়ে লাইন থেকে নেমে পড়ি। সেদিন যদি মারা যেতাম, তাহলে নির্ঘাত সবাই বলতো আমি আত্মহত্যা করেছি।
অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে বললেন, দ্রুত সরে পড়ার জন্য। শুনতে পেলাম, আমি নাকি তালিকায় রয়েছি। যে কোনো মুহূর্তে ‘ক্রসে’ যেতে পারি। যে রাতে সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি রেইড দেয়, সেদিনও আমিও সতর্কবার্তা পাই, সরে যাওয়ার।
সামাজিক অনুষ্ঠানাদি সেরে আমি রাত ১২টা নাগাদ বাসায় ফিরি। দুশ্চিন্তায় ঘুম হচ্ছিল না। রাত ৩টার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। আমি সেদিন একটু আগেই মসজিদে চলে আসি নামাজ পড়তে। দেখি মসজিদের গেট বন্ধ। পরে ডাকাডাকি করে গেট খুলে আমি মসজিদে ঢুকে নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে ফেরার পথে দেখি, আমার ছোটভাই হাসান দৌঁড়ে এসে আমাকে চুপিচুপি বলে, সেনাবাহিনী বাড়ি রেইড দিয়েছে। আমি অন্য গেট দিয়ে নেমে ট্যাক্সি নিয়ে দ্রুত সরে যাই। সেদিন আমার বড় ভাইদের কাউকেই বের হতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার ছোটভাই বের হওয়ার সময় সেনাবাহিনী কিছু বলেনি। এটাই মনে হয় আমার জন্য আল্লাহর দোয়া ছিল।