মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন: ব্রেস্ট আয়রনিং

অল্প বয়স থেকে কোনো মেয়ের স্তন গরম কিছু দিয়ে ইস্ত্রি করে দেওয়া হয় যাতে সেটি বড় না হয়। যাতে তার ওপর পুরুষের নজর না পড়ে।

- Advertisement -

এই প্রথাটি এসেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। কিন্তু এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে।

- Advertisement -google news follower

এ অবস্থায় ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন ‘ব্রেস্ট আয়রনিং’-এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল  কারিকুলামে বিষয়টি বাধ্যতামুলকভাব অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে। যাতে ছোট মেয়েদের এই নির্যাতন থেকে রক্ষা করা যায়। তথ্যসূত্র: বিবিসি

মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন: ব্রেস্ট আয়রনিং
অনেক মেয়েকে তাদের বুকের ওপর খুব আঁটো করে স্ট্র্যাপ বেঁধে রাখতে বাধ্য করা হয়
‘কাঁদতে মানা’

মেয়েটির পরিচয় গোপন রাখতে তাকে আমরা ‘কিনায়া’ নামে ডাকছি। কিনায়া ব্রিটেনে থাকে। তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষরা এসেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। ‘ব্রেস্ট আয়রনিং’ এর প্রথাটা সেখান থেকেই আমদানি করা।

- Advertisement -islamibank

মাত্র দশ বছর বয়সে কিনায়াকে এই যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়। কিনায়াকে তার মা বলেছিল, “যদি তুমি তোমার স্তন ইস্ত্রি না করো, পুরুষরা তোমার কাছে এসে তোমার সঙ্গে যৌনকাজ করতে চাইবে।”

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা নিজেই মেয়ের স্তন ইস্ত্রি করার কাজটি করতে উদ্যোগী হয়। সাধারণত একটি পাথর বা চামচ আগুনের শিখায় গরম করা হয়, এরপর এটি মেয়ের বুকের ওপর চেপে ধরে বা ম্যাসাজ করে স্তন সমান করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ প্রক্রিয়া চলে কয়েক মাস ধরে।

মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন: ব্রেস্ট আয়রনিং
কিনায়া এবং তার মেয়ে

কিনায়া জানায়, ব্যাপারটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং সময় যতই যাক, এই যন্ত্রণা ভোলার নয়। যখন এই কাজটি করা হয়, তখন আপনাকে কাঁদতেও দেওয়া হবে না। যদি কেউ কাঁদে, সে নাকি তার পরিবারের জন্য লজ্জা নিয়ে আসছে।

কিনায়া এখন বড় হয়েছে, তার নিজেরই রয়েছে কন্যাসন্তান। যখন তার প্রথম মেয়ের বয়স দশ পেরুলো, তখন কিনায়ার মা বললো, মেয়েটির ‘ব্রেস্ট আয়রনিং’ করা দরকার।

না, না, আমি যে যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছি, আমার মেয়েদের বেলায় আমি তা হতে দেব না- সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন কিনায়া।

কিনায়া এখন তার মা এবং পরিবারের কাছ থেকে আলাদা থাকেন, কারণ তার সন্দেহ, পরিবারের সঙ্গে থাকলে তার মেয়েদের ওপর ওরা হয়ত সেই কাজটি করার চেষ্টা করবে।

ধারণা করা হয়, ব্রিটেনে হয়তো প্রায় এক হাজার মেয়ে এমন ঘটনার শিকার হয়েছে।

ব্রিটেনে ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) বা মেয়েদের যৌনাঙ্গ বিকৃত করার বিরুদ্ধে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু ব্রেস্ট আয়রনিংয়ের ব্যাপারে খুব কম লোকই জানে।

বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানে একটি মেয়ে বলে, প্রাইমারি স্কুলে ফিজিক্যাল এডুকেশনের ক্লাসে গিয়ে প্রথম বুঝতে পারি আমার শরীর অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা। তখন প্রথম বুঝতে পারি ব্রেস্ট আয়রনিং ব্যাপারটা আসলে স্বাভাবিক নয়। এরপর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি।

আট বছর ধরে মেয়েটির ব্রেস্ট আয়রন করেছিল তার বোন। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা কিছু বুঝতে পারেননি। মেয়েটি সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, স্কুলের শারীরিক শিক্ষার ক্লাসেও যাচ্ছিল না।

‘যদি আমার শিক্ষকরা জানতেন, যদি তাদের প্রশিক্ষণ থাকত, তারা হয়ত আমাকে সাহায্য করতে পারতো যখন আমি এসবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম’, বলছিল মেয়েটি।

ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের যুগ্ম সভাপতি কিরি টাংকস সব স্কুল স্টাফকে এই বিষয়গুলো যেন তারা ধরতে পারেন, সেজন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। যেভাবে এফজিএমের বিষয়ে স্কুলগুলোকে সচেতন করা হয়েছে, অনেকটা সেভাবে।

মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন: ব্রেস্ট আয়রনিং
সিমোনেকে মাসের পর মাস ব্রেস্ট আয়রনিং এর যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়

সিমোনে নামে আরেকজন মহিলা বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানে বলেন, যখন তার ১৩ বছর বয়স, তখন তার মা আবিস্কার করে যে সে সমকামী। তখন থেকে তার ব্রেস্ট আয়রনিং শুরু করে তার মা।

মায়ের ধারণা ছিল, আমার স্তনের জন্যই হয়ত আমি আকর্ষণীয় ছিলাম। কাজেই আমার স্তন যদি ইস্ত্রি করে সমান করে দেওয়া যায়, তখন আমাকে কুৎসিত দেখা যাবে, কেউ আর আমাকে পছন্দ করবে না।

কয়েক মাস ধরে ব্রেস্ট আয়রনিং চলতে থাকে।

পাশাপাশি আমাকে খুবই টাইট একটি স্ট্র্যাপ বা ফিতা পড়ে থাকতে হতো বুকের ওপর। যাতে স্তনকে আরও চেপে রাখা যায়। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হতো।

এই যন্ত্রণা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারেননি সিমোনে-যখন আমি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াই, সেটি এত কষ্টদায়ক। মনে হয় যেন আমার স্তনের মধ্যে একটা গিঁট পাকানো।

ব্রিটেনে ব্রেস্ট আয়রনিং এখনো আইনে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি এক ধরনের শিশু নির্যাতন এবং বিদ্যমান আইনেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

ব্রিটিশ চেশায়ার পুলিশের এক কর্মকর্তা এবং সাবেক স্ত্রী রোগ বিষয়ক নার্স অ্যানজি মেরিয়ট মনে করেন, ব্রিটেনে এই সমস্যা যতটা ব্যাপক, তার কমই আসলে জানা যায়। কারণ অনেকেই এ ধরনের ঘটনা বাইরে জানায় না। এটিকে তিনি এক গোপন অপরাধ বলে বর্ণনা করেন।

এদিকে সিমোনে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ব্রেস্ট আয়রনিংয়ের নামে, সেটির যন্ত্রণা এখনো বহন করে চলেছেন। তিনি এখন এই অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে চান।

সিমোনে বলেন, খুব কম করে বললেও বলতে হয়, এটি একটি নির্যাতন। এটি আপনাকে যন্ত্রণা দেয়, আপনাকে মানবেতর করে তোলে। আপনাকে যেন মানুষ বলে গণ্য করা হয় না।

জয়নিউজ/হিমেল
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM