ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, চারদিকে বৈষম্য বেড়েছে, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। মূল্যবোধের অভাব সর্বত্র। আমরা রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ দিচ্ছি। কিন্তু এখানে আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ের দায়িত্বও কম নয়। ব্যক্তি পর্যায়ে সৎ, বৈষম্যহীন এবং মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনযাপন সমাজে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে রইসুল হক বাহারের মতো মানুষ অনন্য।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রইসুল হক বাহার স্মরণসভা পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় একথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাহার স্মরণীয় এবং শ্রদ্ধার। স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন দেশ পাওয়ার অর্থ কি? বৈষম্যহীন, স্বাধীন চেতনাবোধ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এসবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমার অহংকার আমি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। যখন ভারতে বসে যুদ্ধজয়ের খবর শুনি, তখন মনে হয়েছে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্য থাকবে না।
রইসুল হককে সৎ উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, বন্দরের মতো জায়গায় চাকরি করলে মানুষকে পরিবার চালানোর জন্য ভাবতে হয় না। কিন্তু তিনি সংসার চালানোর জন্য খণ্ডকালীন হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। এটা তাঁর সততার অনন্য দৃষ্টান্ত। সৎ ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ রইসুল হকের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে চিন্তাও ছিল অনেক বেশি। এটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই এসেছে।
আবুল মোমেন বলেন, বাহার আপোষ করেননি। তিনি তরুণদের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর কোনো সংগঠন ছিল না। কিন্তু তিনি জনে জনে বন্ধন তৈরি করেছিলেন। নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক রইসুল হক বাহারকে হারিয়ে আমরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সমাজ ও রাষ্ট্রের এ সময়ে তাঁর মতো গুণী ব্যক্তির প্রয়োজন জাতি গভীরভাবে অনুভব করবে। তিনি বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ বির্নিমাণের স্বপ্ন দেখেছেন আজীবন। তাঁর অসম্পূর্ণ স্বপ্নপূরণে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ববান হতে হবে।
স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাবউদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম। শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সাংবাদিক সুভাষ দে।
পরিষদের সদস্য সচিব সুশান্ত বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন বাবুল, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি চন্দন দাশ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা অপু দাশগুপ্ত, গণসংহতি আন্দোলনের হাসান মারুফ রুমি, আইনজীবী ভুলন ভৌমিক, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন রক্তকরবীর শিল্পীরা।
জয়নিউজ/এফএম/জুলফিকার