শেখ হাসিনা; একজন নারী, একজন মা, একজন শাসক। তাঁর আরো পরিচয়- তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা, বাংলাদেশের জাতির জনক ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে ফিরে বাঙালির আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের উন্নয়নের কাণ্ডারি তিনি। মাদার অফ এডুকেশন থেকে শুরু করে সর্বশেষ মাদার অফ কওমী, কী নেই তাঁর ঝুলিতে?
শুধু কি তাই?
বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে চলতি বছরের বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনটি শেখ হাসিনাকে বিশ্বের কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাতারে রেখেছেন? শেখ হাসিনার সঙ্গে একই তালিকায় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন। এছাড়া গত ২০১৭ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩০তম অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস সেই তালিকা করেছিল।
কিন্তু এবার সবাইকে চমকে দিতে আসছে হাসিনার নতুন এক রূপ। যা কেউ ভাবেনি, দেখেনি এতদিন। অন্তর্জাল দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বিষয়টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন (২৮ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে প্রকাশ পেয়েছিল ‘হাসিনা, অ্যা ডটারস টেল’ শিরোনামের একটি সিনেমার ট্রেলার। যেটি দেখলে মুগ্ধতা খেলে যাবে যেকারো মনে। এমনকি হাসিনার বিরোধী পক্ষও অপেক্ষায় থাকবে সিনেমাটি দেখার। সবার চোখ এখন হাসিনাকে রূপালি পর্দায় দেখা যাবে।
হ্যাঁ, এবার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বানানো হলো ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ চলচ্চিত্র। যা মুক্তি পেতে যাচ্ছে ১৬ নভেম্বর। পিপলু চৌধুরীর পরিচালনায় ছবিটি দেশের চারটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ঢাকার বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার ও মধুমিতার পাশাপাশি ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের মিনিপ্লেক্সেও।
জানা গেছে, ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’ মূলত একটি ডকু-ড্রামা। অর্থাৎ যা পুরোপুরি ডকুমেন্টারি নয়, আবার ড্রামাও নয়। দুটোরই মিশেল। এই ট্রেলার প্রকাশ হওয়ার পরপরই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। এটি প্রযোজনা করেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
আমরা জানি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। বিশ্বের বুকে ইতিহাসের নৃশংসতম ষড়যন্ত্রে নিঃসঙ্গ হয়ে যান শেখ হাসিনা। কেবল একজন মাত্র বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে বেঁচে রইলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেই রাতে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘাতকদের গুলিতে খুন হন। কিন্তু হাসিনার জীবনপ্রদীপ নেভাতে পারেনি ঘতকের বুলেট। ইতিহাস যার অপেক্ষায় ছিল সেই হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চলে এলেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
এই চলচ্চিত্রের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা- শেখ হাসিনার জীবনের দুঃখ-বিষাদ, ব্যক্তিগত আখ্যান, আর নৈকট্যের গল্পগুলোকে সূক্ষ্মভাবে দেখবো। শেখ হাসিনার একান্ত ব্যক্তিগত জীবনটি আর ব্যক্তিগত রইল না, তা কিভাবে এই বঙ্গিয় জনপদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে, সেটাই এবার উঠে আসুক রূপালি পর্দায়। ৭০ মিনিটের ডকু-ড্রামায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালা বদলের ইতিহাসও উঠে আসবে নিশ্চয়। যার উত্থান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাঙালি জাতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিনেমাটিতেও নিশ্চয় প্রতিফলিত হবে সেই রাজনৈতিক পালাবদল আর রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা।
চলচ্চিত্রটির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ছিলেন সাদিক আহমেদ। সম্পাদনায় ছিলেন নবনীতা সেন এবং সংগীতে আছেন ভারতের বিখ্যাত মিউজিশিয়ান দেবজ্যোতি মিশ্র। ইতোমধ্যে এই ডকু-ড্রামায় নবনীতার গাওয়া ‘আমার সাধ না মিটিলো’ গানটির চারদিকে জয়জয়কার। নির্মাতা জানিয়েছেন, ছবি মুক্তির আগে একটি প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। দুই মিনিট ৪৮ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ট্রেলারটি ফেসবুকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা টুইটার আর ফেসবুকে লাখ লাখ শেয়ার করেছেন। এবার বোধহয় সেই অপেক্ষার পালা শেষ।
আমরা জানি, পৌরাণিক কাহিনীতে আগুনের শিখা থেকে ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি। ফিনিক্স পাখি বারবার নতুনভাবে জীবন পেয়ে ফিরে আসে। এবার তাহলে রূপালি পর্দায় হলভর্তি দর্শকশ্রোতাদের সামনে উঠবে বাঙালির ফিনিক্স পাখি। অপেক্ষায় আছি নতুন রূপালি পর্দার শেখ হাসিনাকে দেখার!