ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ২০০৯ সালে গ্রানাডায় ২১৭ রান তাড়া করে জিতেছিলো বাংলাদেশ দল। যা ছিলো বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। তাই সিলেট টেস্ট জিততে হলে বাংলাদেশ দলকে রেকর্ড গড়েই জিততে হবে। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি জাদুতে ১৮১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুইয়নরা। ফলে ৩২১ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বাংলাদেশ দলের সামনে।
চা বিরতির আগ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের রান ছিল ১৬৫। তখন জিম্বাবুয়ের লিড দাঁড়িয়েছিল ৩০৪ রান। বাংলাদেশের জন্য যা রীতিমত বিশাল হিমালয় পাহাড়ের সমান। শেষ পর্যন্ত ১৮১ রানেই অলআউট হলো মাসাকাদজারা। তাইজুল ইসলাম পেলেন ৫ উইকেট, মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি এবং নাজমুল ইসলাম অপু নেন ২ উইকেট।
তৃতীয় সেশন শুরুর পরপরই ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারলেন মেহেদী মিরাজ। ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে সাজঘরে ফেরান তিনি। ৬০ বলে ১৭ রান করেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ভাই। তার আগেই দ্বিতীয় সেশনে অবশ্য তাইজুল ঘূর্ণিতে দ্রুত উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। শন উইলিয়ামস, পিটার মুরকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলে সিকান্দার রাজা তাইজুলের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দিলেও দুই বল পর ঠিকই সেই সিকান্দারকে বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই স্পিনার।
সিকান্দার রাজার উইকেট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্টে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান তাইজুল। সে সঙ্গে মাশরাফিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিন নম্বরে চলে আসেন তিনি।
লাঞ্চের আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন আগের ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার শন উইলিয়ামস। বিরতি থেকে ফিরেই মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো মাসাকাদজার। তেড়েফুঁড়ে মারমুখী ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে হারিয়েছেন তিনি।
ইনিংসের ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। কিন্তু পুরোপুরি পরাস্ত হওয়ায় বল আঘাত হানে তার প্যাডে। দুইবার না ভেবেই আউটের সিদ্ধান্ত জানান আম্পায়ার।
ব্যক্তিগত অর্ধশত থেকে মাত্র দুই রান দূরে থাকা মাসাকাদজা অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামসের সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলে রিভিউ না করারই সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ম্যাচে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন তিনি। ১০৪ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসে ৭ চারের মারে ৪৮ রান করেন মাসাকাদজা।
প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ১৩৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। দ্বিতীয় দিন শেষে জিম্বাবুয়ে এগিয়ে যায় ১৪০ রানে। তবুও দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলামের কণ্ঠে ছিলো আশার সুর, বলেছিলেন জিততেও পারে বাংলাদেশ। তবে তার জন্য কয়েকটি শর্ত পালন করতে হবে। সেটা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব, খুব বেশি হলে ১৫০ রানের মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে বেধে রাখতে হবে জিম্বাবুয়েকে। এরপরের দায়িত্ব ব্যাটসম্যানদের।
সফরকারী দলটিকে কম রানে বেধে রাখতে হলে তৃতীয় দিনের শুরুতেই একটা ব্রেক থ্রু এনে দেয়া প্রয়োজন ছিল। সেই ব্রেক থ্রুটাই এনেছিন তরুণ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ফিরিয়ে দেন জিম্বাবুয়ে ওপেনার ব্রায়ান চারিকে। ১৯ রানে পড়ে প্রথম উইকেট।
জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা এবং ব্রায়ান চারি মিলে দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে মাত্র ১ রান করে সাজঘরে যান। আজ সকালে সেখান থেকে শুরু করার পর আরও ১৮ রান যোগ করেন তারা। এরই মধ্যে তাইজুল, আবু জায়েদ রাহী, নাজমুল ইসলাম অপুদের ব্যবহার করে ফেলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মেহেদী হাসান মিরাজকে আনার পর দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য এনে দেন তিনি। অসাধারণ একটি বল করেন তিনি ব্রায়ান চারিকে। ইনিংসের ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলটিকে মিরাজ ভাসিয়ে দেন বাতাসে। চারি একটু ফরোয়ার্ড ফুটে এসে খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল টার্ন করে গিয়ে লাগে ব্যাটের ভেতরের কানায় এবং ব্যাটকে চুমু দিয়ে গিয়েই স্ট্যাম্পটা ভেঙে দেয় সেই বলটি। বোল্ড হয়ে যান চারি। ৩৩ বল খেলে ৪ রান করেন তিনি।
ব্রায়ান চারি আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন ব্রেন্ডন টেলর। মাঠে নেমেই কিছুটা চড়াও হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি। তবে, তাকে বেশিদুর এগুতে দেননি তাইজুল ইসলাম। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় তাকেও ফিরিয়ে দেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
প্রথম ইনিংসে তাইজুলের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি উইকেট দেন তাইজুলকে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি খেলতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দেন টেলর। পেছনে দিকে অনেকদুর দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটা তালুবন্দী করেন ইমরুল কায়েস। ২৫ বলে ২৪ রান করে ফিরে যান টেলর।