সোনাই ত্রিপুরা পল্লীর সাড়ে তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু সবরকম নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় কোনো নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না তারা। কয়েকদিন আগে চার শিশুর মৃত্যুতেও তাই অশ্রু নেই ওদের চোখে। বরং জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আছে ঘৃণা। কারণ পদে পদে অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার এই পল্লীর বাসিন্দারা।
উপজেলার ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পল্লীটি। পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ আর অভিযোগের শেষ নেই। এখনও পর্যন্ত তারা পায়নি কোনোরকম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। যদিও প্রায় দুই থেকে তিনশ’ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এখানে বসতি তাদের। তবে নির্বাচন এলে নাকি দেখা মিলে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এমপিদের। নির্বাচন শেষ হলে এরা হয়ে যান অমাবস্যার চাঁদ।
পল্লীতে এতগুলো মানুষ বসবাস করলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বিগত আট বছরেও তারা চোখে দেখেননি বলে এ প্রতিবেদককে জানান হারাধন ত্রিপুরা। তিনি আরো জানান, স্থানীয় মেম্বার বাদশা আলম ২০০ গজ দূরে থাকলেও কখনো আসেননি। দেখা মেলেনি স্থানীয় চেয়ারম্যান ইদ্রিছ মিয়া তালুকদারের। আর এমপিকে তো চোখে দেখিনি জীবনেও।
পাহাড়ের পাশে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পল্লীর বাসিন্দারা। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষরা পাহাড়ে জুম চাষ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে বলে জানান ষাটোর্ধ্ব মুন্দাইরা। বয়স্কভাতা পান কি না জানতে চাইলে তিনি বয়স্কভাতা কি তা জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এছাড়া বিধবাভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতাও এ জনপদের বাসিন্দারা কখনও পায়নি।
ধনমিয়া ত্রিপুরা জানান, আমাদের পরিবারের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন নেই। সোনাই ত্রিপুরা পল্লী থেকে ইউনিয়ন পরিষদের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার হওয়ায়, যাতায়াতে কোনো যানবাহন সুবিধা না থাকায় তারা পরিষদে গিয়ে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে পারেন না। ফলে এলাকার এসব পরিবারের বেশিরভাগ শিশুর জন্ম নিবন্ধন নেই। এছাড়া এলাকার নিশিচন্দ্র ত্রিপুরার কন্যা উদালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না ত্রিপুরা (১৩) জানান, তারা জন্ম নিবন্ধন কাকে বলে তাও জানে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলার ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া তালুকদারকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পার্শ্ববর্তী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর ত্রিপুরা পল্লীতে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের সাহায্য করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুন্নেছা শিউলী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, অজ্ঞাত রোগে ৪ শিশু নিহত হওয়ার একদিন পর আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
জয়নিউজ/আরসি