সাইনবোর্ড ঝুলছে স্কুল এন্ড কলেজ নামে, তবে ভেতরে গেলেই চমক! পড়ানো হচ্ছে সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত! প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কথা বাদ, আবাসিক ভবনে চার কক্ষের ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে স্কুল খুলে বসারও প্রমাণ মিলেছে। সরেজমিন ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক হিমেল ধর।
জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, প্রচারের জন্য লাগানো। শিক্ষাবিদদের প্রশ্ন, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারের নামে এ ধরনের ‘প্রতারণা’ করা হয়, সেখান থেকে কী শিখবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা?
কথা হচ্ছিল নগরের সাইনবোর্ড সর্বস্ব স্কুল এন্ড কলেজগুলো। প্রচারপত্র বা সাইনবোর্ডে কলেজ নামটি ব্যবহার করা হলেও এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবার পঞ্চম শ্রেণির উপরের ক্লাসে কোন শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি।
দীর্ঘদিন ধরেই নগরে চলছে শিক্ষার নামে এই প্রতারণা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি শিক্ষা বোর্ডের। বার বার বলা হয়, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থার দেখা এখন পর্যন্ত পায়নি নগরের মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে নগরের বাকলিয়া এলাকায় এ ধরনের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখা মিলেছে। নগরের অন্যান্য স্থানেও এ ধরনের নামসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে বাকলিয়াতেই এই সংখ্যাটা বেশি।
বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে দেখা যায়, আবাসিক ভবনের একটি চার কক্ষের ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে তাতে দুই শিফটে চলছে ক্লাস। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অধিকাংশই অনুপস্থিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাবোর্ডের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই চলছে এই স্কুলগুলো।
কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার অনুমতি থাকলেও সাইনবোর্ডে স্কুল এন্ড কলেজ লাগাতেও দেখা গেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দাবি, মূলত প্রচারণার উদ্দেশ্যেই সাইনবোর্ড-প্রচারপত্রে কলেজ শাখার নাম ব্যবহার করা হয়!
তারা যা বললেন…
প্রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, সাইনবোর্ডে কলেজ লেখা হয়েছে, কারণ ভবিষ্যতে কলেজ করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু অর্থের জন্য করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া প্রচারণার বিষয়টাও আছে। এখন আমাদের এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে।
বাকলিয়া প্রিমিয়ার স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন বলেন, উদ্যোক্তারা চান কলেজ শাখা চালু করতে। তাই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই স্কুলের সঙ্গে কলেজ নামটি ব্যবহার হয়েছে। তবে এখনো দ্বাদশ শ্রেণি চালু হয়নি। তবে আশা করছি খুব দ্রুত কলেজ চালু হবে।
সিলভার স্কাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ছাত্র-ছাত্রী না থাকার কারণে কলেজ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চালু করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমাদের এখানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৩৫ জনের মতো শিক্ষার্থী আছে।
সিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর বলেন, নিজস্ব ভবন না থাকায় কলেজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে স্কুল এন্ড কলেজ নাম দিয়ে। তাই সাইনবোর্ডে স্কুল এন্ড কলেজ নামটা লেখা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।
ওয়েস্টার্ন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, কলেজ লেখার কারণ ভবিষ্যতে কলেজ শাখা চালু করার ইচ্ছে আছে। তবে সামর্থ্যটা এখনও হয়ে উঠছে না। আশা করছি সামনে হবে। আমাদের স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তব্য
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহেদা ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, স্কুল এন্ড কলেজের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা থাকার সঙ্গে কিছু প্রশাসনিক বিধিনিষেধও মানতে হয়।
স্কুলের আবেদন করে কলেজ নাম লাগানো বেআইনী উল্লেখ করে তিনি জানান, কলেজ শাখা খোলার আবেদন দুই ভাবে করা যায়। যদি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, তাহলে কলেজ শাখা করার জন্য আবেদন করতে হবে। আর শুধু কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, কলেজের নামে আবেদন করতে হবে। যেসব স্কুল দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ায় এবং কলেজ করতে চায়, তাদের অনুমতি নিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।
তিনি আরো বলেন, যেসব স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতির কাগজপত্র থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।