স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে লক্ষ্মীপুরে গিয়েছিলেন রাউজানের তরুণী শাহিনুর (২০)। চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে প্রত্যাখানের আগুনে। শাহিনুর তার বাড়ি ফিরেছেন, তবে আগুনে পুড়ে, লাশ হয়ে।
লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের পাটারিরহাট এলাকায় রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত সালাউদ্দিন পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের মহর আলীর ছেলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সোনাগাজি গ্রামের জাফর আলমের মেয়ে শাহিনুরের। বেশ কিছুদিন মোবাইলে প্রেম করেন তারা। দেড় বছর আগে কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হয়।
কিছুদিন আগে লক্ষ্মীপুরে আসে শাহীনুর। চায় স্ত্রীর স্বীকৃতি। কিন্তু পেশায় রিকশাচালক সালাউদ্দিন আগেও একটি বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে দুটি ছেলেও আছে। তাই সালাউদ্দিন তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।
বাধ্য হয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে শাহীনুর ঘুরতে থাকেন দুয়ারে দুয়ারে। এসময় সালাউদ্দিন শাহিনুরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার সিদ্ধান্তে অটল শাহিনুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিচার দিতে থাকে।
চরফলকন ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা পারভীন আক্তার, রুপক, মাজহার হোসেন অভিযোগ করেন, চরফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. হাফিজ উল্যা ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহের বিষয়টি জানতেন। তারা বিষয়টি সুরাহা করে দেবেন বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় রোববার বিকেলে সালাউদ্দিন তাদের বাড়ির পাশের একটি সয়াবিন ক্ষেতে শাহীনুরকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে আইয়ুবনগর এলাকার ওই সয়াবিন ক্ষেত থেকে ওই দিন বিকেলে তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দগ্ধ শাহিনুরকে চিনতে না পেরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে কমলনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় ওই তরুণীকে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন জয়নিউজকে জানান, রোববার দগ্ধ তরুণীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তরুণীর মুখ-হাতসহ শরীরের প্রায় ৩০ ভাগ পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে রোববার রাতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সফিউজ্জামান ভূঁইয়া ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন সদর হাসপাতালে ওই তরুণীকে দেখতে আসেন এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। পরে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
সোমবার সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহীনুর।
এদিকে ওই এলাকার কয়েকজন গায়ে কেরোসিন দিয়ে শাহিনুর নিজেই আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন।
তবে রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ ঘটনার জন্য সালাউদ্দিনকে দায়ী করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন শাহীনুর। কমলনগর থানার এসআই খোরশেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঘটনার পর শাহীনুর সদর হাসপাতালে দেওয়া জবানবন্দিতে এ ঘটনার জন্য সালাউদ্দিনকে দায়ী করেছেন।
স্থানীয় চরফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য হাফিজ উল্যা আটক হওয়ার আগে রোববার রাতে সাংবাদকর্মীদের জানান, প্রত্যাখ্যাত হয়ে শাহিনুর গত দু’দিন ধরে ওই এলাকায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে থাকেন। পরে তার কাছে বিচার দাবি করেন।
কমলনগর থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন জয়নিউজকে জানান, এ পর্যন্ত ইউপি সদস্যসহ ৪ জনকে আটক করা হলেও সালাউদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তরুণী নিজে গায়ে আগুন দিয়েছেন না অন্য কেউ তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সালাউদ্দিনের ভাই আব্দুর রহমান বিশ্বাস ও আলাউদ্দিনসহ দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহেরকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জয়নিউজকে জানান, অগ্নিদগ্ধ শাহীনুরের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত চলছে। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।