পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে এখানে পরিবেশগত নানা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে নানা প্রাণী।
অতিরিক্ত পর্যটক এ দ্বীপের ভারসাম্যের জন্য হুমকি। এর ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে বলে সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে। দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছিল সরকার।
সূত্রমতে, স্বচ্ছ পানি ও চারপাশ জুড়ে প্রবাল পাথরবেষ্টিত পুরো দ্বীপটিই নৈসর্গিক সৌন্দর্যে অপরূপ। প্রায় ৯ হাজার মানুষের বসবাস এ দ্বীপে। প্রবালদ্বীপের সৌন্দর্য্ উপভোগ করতে শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত থাকে পুরো দ্বীপ এলাকা। ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যটকদের সংখ্যা।
দ্বীপে প্রতিদিন ৬টি জাহাজ ৭ হাজারের অধিক পর্যটক নিয়ে যাতায়াত করে। পর্যটকদের রাত্রিযাপনে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে ১০৪টি আবাসিক হোটেল। পাশাপাশি এর সাথে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব আবাসিক হোটেল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রাকৃতিক পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা। বেশিরভাগ হোটেলে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এসব বর্জ্যের পাশাপাশি সমুদ্রের পানিতে পড়ছে পর্যটকদের ব্যবহৃত নানা প্লাস্টিকজাত সামগ্রী।
দ্বীপের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর খুবই পাতলা। এখানে অতিরিক্ত পর্যটক আগমনের কারণে পর্যটন মৌসুমে অতিমাত্রায় সূপেয় পানি উত্তোলন করা হয়। এ কারণে দ্বীপের উত্তরে অর্ধশতাধিক নলকূপে পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে দ্বীপে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ জয়নিউজকে জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং সংবেদনশীল। এখানে যদি কোনোরকম পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটে, তাহলে এটি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল আশরাফ জানান, সেন্টমার্টিনে পর্যটক আগমন বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই দশকে এ দ্বীপে অনেক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয়দের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে। এ থেকে রক্ষার জন্য পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করাসহ এখানে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিকর সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।