একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় জয়ের পেছনে ১৪ কারণের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বিএনপি জোটের পরাজয়ের সাতটি কারণও উল্লেখ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই কারণগুলো তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের ঐক্যের যোগসূত্র হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বিজয়ের পর আমরা সরকার গঠন করেছি। সরকারের দৃষ্টিতে দলমত-নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক সমান। আমরা সবার জন্য কাজ করব।
আওয়ামী লীগের জয়ের ১৪ কারণ:
১. বিগত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সাধারণ মানুষ তার সুফল পেয়েছেন।
২. দশ বছর আগে যে বালক-বালিকাটি হারিকেন বা কুপির আলোয় পড়ালেখা করত, গ্রামে পাকা রাস্তা দেখেনি, তরুণ বয়সে সে এখন বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় পড়াশোনা করছে, মোটরযানে যাতায়াত করছে।
৩. যে বয়স্ক পুরুষ-নারী পরিবারে ছিল অবহেলিত-অপাঙেক্তয়, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা তাঁকে সংসারে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে।
৪. গ্রাম বাংলার খুব কম পরিবারই আছে, যে পরিবার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগী নয়। কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি পরিবার উপকৃত হচ্ছেন।
৫. কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ভ্যান বা রিকশাচালকসহ নিম্নবিত্তের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ১০ বছর পূর্বে একজন কৃষি শ্রমিক তাঁর দৈনিক মজুরি দিয়ে বড় জোর ৩ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন তিনি ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন।
৬. সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা বিগত ১০ বছরে আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে।
৭. সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও সমহারে বেড়েছে। যেমন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৬০০ টাকা থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার টাকা হয়েছে।
৮. কৃষিজীবীদের সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
৯. ব্যবসায় এবং শিল্প-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছে। যার সুবিধা সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন।
১০. পদ্মাসেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহাসড়কগুলোকে চার-লেনে উন্নীতকরণসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় সাধারণ মানুষের বর্তমান সরকারের ওপর আস্থা জন্মেছে।
১১. মানুষ নিজের এবং দেশের মর্যাদা চায়। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ৪৬ বছর পর উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি জনগণকেও গর্বিত করেছে। ভিক্ষুকের দেশের দুর্নাম ঘুচেছে। যাঁরা মানুষকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন, তাঁদের মানুষ মর্যাদা দেবেন- এটাই স্বাভাবিক।
১২. আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর থেকেই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রতিটি সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন এবং এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। এবারের নির্বাচনে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করেছেন।
১৩. আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক। সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা করা হয়েছে।
১৪. নির্বাচনি প্রচারকালে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা- সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। একটি সমাজের প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন কোনো দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন, তখন তাকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না।
বিএনপি জোটের পরাজয়ের সাত কারণ:
১. এক আসনে ৩-৪ জন বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন।
২. মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ এবং দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন।
৩. নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন-সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা।
৪. নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেবে-তাদের প্রচারণায় সেটি প্রাধান্য পেয়েছে।
৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা ছাড়া নিজেদের সাফল্যগাথা তারা তুলে ধরতে পারেনি।
৬. ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী অগ্নি-সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।
৭. বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণেরা আর যাই হোক স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না।