পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেখতে না পাওয়ায় বিএনপির নেতাদের চোখ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হসিনা।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো উন্নয়ই নাকি দেশে হয়নি। এখন আমাদের বলতে হয়, আমরা একটা আই ইনস্টিটিউট করেছি। যারা বলে উন্নয়ন হয়নি, তাদের চোখের পরীক্ষা করাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন, এটা তাদের চোখে পড়ে না। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ তারা ব্যবহার করছে, এটা উন্নয়ন না? পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, দারিদ্রের হার হ্রাস—এসব উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না।’
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে, এটাও বিএনপির চোখে পড়ে না, অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হলো। বিশ্বব্যাংক, বিবিসিসহ অনেকে বললো, অন্তত ২ কোটি মানুষ মারা যাবে। আমরা বলেছিলাম, একটি লোকও না খেয়ে মারা যাবে না। এত দীর্ঘসময় বন্যা কখনো থাকেনি বাংলাদেশে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ত্বরিত গতিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে রোগ ছড়ায়নি। ধানের চারা এবং সার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। ওই সময়েই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। তখন তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হলে বিদেশ থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে না। খালেদা জিয়া হাততালি দিয়ে সেটা সমর্থন দিলো। সেও তার বক্তব্যে এটা বলেছিলো। তার জবাবে আমি বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক জাতি হয়ে থাকতে চাই না।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন প্রায় ৯০ ভাগ উন্নয়ন কাজ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি। পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, বাংলাদেশ নিজে পারে। আজকে যে উন্নয়নটা হচ্ছে, সেটি তাদের চোখে পড়বে কেন?’
জনগণের উন্নয়নই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য, জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষকে আর কোনো বিকৃত ইতিহাস শুনতে হবে না। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পাবে, সেটা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
দেশে উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যা বলেছি, তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
গ্রামে কোনো মানুষের ঘরে যাতে অভাব না থাকে, সেজন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে প্রত্যেক গ্রামে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে মানুষের আর অভাব নেই।’
দেশে শিক্ষার হার ৭৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে, জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে শিক্ষার হার ৪৫ ভাগ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে শিক্ষার হার কমে যায়। আজকে মোবাইল ফোন আমরা সবার হাতে পৌঁছে দিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিচ্ছি।’
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে উন্নত দেশও বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। ৭৩ ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে। আমরা রেকর্ড করেছি। এক দিনে ১ কোটি ২৩ লাখ লোককে আমরা ভ্যাকসিন দিতে পেরেছি।’
এ সময় কৃষক ও শ্রমিকদের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।