পার্লামেন্ট থেকে নিজ দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সব এমপিসহ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভবনে দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার অ্যাসেম্বলিতে পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট হবে। তার আগেই জাতীয় পরিষদ ভবনে উপস্থিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তারপর দলের সব এমপির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে ইমরান দলীয় এমপিদের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, ‘আমরা কোনো পরিস্থিতিতেই আর জাতীয় পরিষদে অধিবেশনে বসব না। দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যারা নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাদেরকে ধারাবাহিকভাবে চাপে রাখতে হবে।’
‘আর এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে আমরা সবাই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করব।’
বৈঠকে অবশ্য বেশিরভাগ এমপিই প্রথম দিকে ইমরানের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা যুক্তি দেন— যদি পিটিআইয়ের এমপিরা পদত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে মাঠ ফাঁকা হয়ে যাবে এবং বিরোধীদের জন্য আরও সুবিধা হবে।’
এই পর্যায়ে ইমরান বলেন, ‘আমি হব পদত্যাগ করা প্রথম এমপি এবং অন্য কেউ যদি পদত্যাগ করতে না চায়, তবুও আমি পদত্যাগ করব।’
ইমরানের এই বক্তব্যের পর এমপিরা তার নির্দেশ মেনে নেন এবং বলেন, এ ব্যাপারে দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবেন তারা।
সফল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান ২০১৮ সালে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ, বিশ্বের কাছে শ্রদ্ধা পাওয়ার মতো দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসনে থাকা পাকিস্তানে তার ক্ষমতা আরোহনের নেপথ্যে সেনাবাহিনীর আশির্বাদ ছিল বলেই মনে করা হয়। যার উপর ভর করে বড় দুই দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) হটিয়ে ক্ষমতায় বসেন তিনি।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের সম্পর্কের অবনতির মধ্যে বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে জাতীয় পরিষদে।
সেটা আটকাতে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মতো কৌশল ইমরান করলেও পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তা আটকে দেয়। আদালতের আদেশেই শনিবার মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে ইমরানের বিদায় ঘণ্টা বাজে। তার আগে জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কাইসার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি পদত্যাগ করেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার প্রধান মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারলেও ইমরানের আগে আর কাউকে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়নি।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের জনগণকে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান।
পাকিস্তানের ৩৪২ সদস্যের পার্লামেন্টে এখনো এককভাবে ইমরানের দল পিটিআইর সদস্য বেশি। এই দলের ১৫৫ জন সদস্য রয়েছেন পার্লামেন্টে। শাহবাজের দল মুসলিম লিগের সদস্য ৮৪ জন। প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর দল পিপিপির সদস্য ৫৬ জন। পিপিপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেনজিরের ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো।