মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল দেবী দুর্গার আরাধনা। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনি ও মন্ত্রোচ্চারণের আওয়াজে সরব হয়ে উঠেছে পুজো মন্ডপগুলি। চারিদিকে এখন উৎসব আমেজ।
নগরের প্রতিটা পূজামণ্ডপকে ঘিরে সেজেছে পুরো এলাকা। চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে যেন দূরে সরে যাচ্ছে অন্ধকার। নতুন নতুন সব থিম নিয়ে হাজির হচ্ছেন এলাকার উদযাপন কমিটি। কোথাওবা অসাম্প্রদায়িক চেতনা, আর কোথাও আলোর আয়োজন।
আর দুর্গা পূজা মানেই ঢাকিয়েদের আলাদা কদর। তাদের ঢাকের তালে কোমর দুলে খুশিতে নেচে উঠে মন প্রাণ। তবে এই ‘পেয়ারে পেয়ারে সাউন্ড বক্সে’ হিন্দি আর ডিজে গানের যুগে নিজেদের টিকিয়ে রাখা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে জয় ঢাকের। তবে দেবীর মূল আরাধনায় জয়ঢাকের কিন্তু বিকল্প নেই।
দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের মণ্ডপে জয়নিউজের সাথে কথা হল ঢাকিয়ে রাখল দাসের সাথে। তিনি বলেন, ২২ বছর ধরে তিনি ঢাক বাজান। পূজা পার্বণে তার দলের ডাক পড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এবার প্রায় ৬০ হাজার টাকায় বায়না হয়েছে দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের পূজা কমিটির সাথে।
ষষ্ঠী পুজোর তিনটি ভাগ বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আজ সোমবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং সায়ংকালে বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়েছে। আর মণ্ডপে রাতে চলেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঢাকের বোল, হিন্দি-ডিজে গানসহ মনোমুগ্ধকর লাইটিংয়ের কাজ।
নগরের কুসুম কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে এসে দেখা মিলল আলোর খেলা। ছোট বড় প্লাস্টিকে গ্লাস দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো মণ্ডপ। এত আলোর উৎস খুঁজতে খুঁজতে ভক্তরা প্রাণ ভরে করতে পারবেন দেবীর আরাধনা।
টেরিবাজার বাই লেইন ঘুরে দেখা গেল, পুরো মণ্ডপে প্রতিমাকে ঘিরে আরো অনেক মূর্তি। হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম আর খ্রিস্টান সব ধর্মের সাধকদের সহাবস্থানের পাশাপাশি আছে কিছু নরপিশাচ। তাদের দমনেই যেন দুর্গার আবির্ভাব। চোখ জুড়ানো লাইটিং তো আছে।
নগরের হাজারী গলি, রাজাপুকুর পাড়, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, রুমঘাটা, চকবাজার সব মণ্ডপেই চলছে ষষ্ঠী পূজার উৎসব। এই উৎসব চলবে ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত।
ওপার বাংলার অকাল প্রয়াত সংগীত শিল্পী কালিকাপ্রসাদ গেয়েছেন, ‘বলদে চড়িয়া শিবে শিঙ্গায় দিলা হাঁক আর শিঙ্গা শুনি মর্ত্যেতে বাজিয়া উঠল ঢাক।’ সত্যিই যেন ঢাকের বোলে পূজার অনন্দ বেড়ে যায় শতগুণ।