রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যা মামলায় মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদার ওরফে মুসাকে ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সকালে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের দল তাকে নিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। সেখান থেকে মুসাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারণে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেনি।
মুসাকে দেশে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবি পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে আনা হবে। এরপর আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সমন্বয়ে অনুষ্ঠানিকতা শেষে ভোরে ওমানের রাজধানী মাসকাটের সালালাহ বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশ পুলিশের দলটি মুসাকে হেফাজতে নিয়ে এসকর্ট দিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিবি পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত জোড়া খুনে মুসাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আছে। এরই মধ্যে মুসাকে নিয়ে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন মানিক নামে এক আসামি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। আগে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে আরেক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল। তদন্তে টিপুকে খুনের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে এসেছে। মুসাকে ফিরিয়ে আনা এবং তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
মুসাকে দেশে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবি পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে আনা হবে। এরপর আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তারের পরই মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মুসার নাম এসেছে। এক সময় মিরপুরকেন্দ্রিক সন্ত্রাসী মুসা অপরাধ জগতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ-প্রকাশের অনুগত বলে পরিচিত। বিদেশে থাকা আরেক সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে পলবী থানায় ১০টি ও মতিঝিল থানায় একটি মামলা আছে। হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির আইনের এসব মামলা হয়েছে।
জাহিদুল ইসলাম হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজিয়ে ঘটনার আগেই ১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে চলে যান মুসা। সেখান থেকে চলে যান ওমানের মাসকাটে। মতিঝিল-শাহজাহনপুরের স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভুগী পরিবারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য পায় ডিবি পুলিশ। র্যাব একই তথ্য পেয়েছে। গত ৯ মে ডিবির পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবিকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, মুসা দুবাই হয়ে ওমানে অবস্থান করছে। চিঠিতে তাকে গ্রেপ্তারে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। ১০ মে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ওমানের এনসিবিকে মুসার তথ্য দিয়ে গ্রেপ্তারের অনুরোধ করে। ১৭ মে ওমানের এনসিবি মুসাকে আটকের তথ্য জানায়। এরপর মুসাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইন্টারপোলের নিয়ম আনুযায়ী, অর্থাৎ জাহিদুলসহ জোড়া খুনের মামলায়ই মুসাকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মুসার পাসপোর্টের নাম সুমন শিকদার। তার বাবার নাম আবু সাঈদ শিকদার। মা জরিনা আক্তার। স্ত্রী নাসিমা আক্তার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার পরাইখারা কইখাইন গ্রামে তাঁর বাড়ি।
জয়নিউজ/পিডি