খালেদ আহমেদের বোলিং তোপে অ্যান্টিগা টেস্টের ভবিষ্যৎ চতুর্থ দিন পর্যন্ত জিয়িয়ে রাখল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দেয়া ৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে খালেদ আহমেদের বোলিং তোপে তৃতীয় দিন শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে ক্যারিবীয়রা।
দিন শেষে ২৮ রানে অপরাজিত রয়েছেন জন ক্যাম্পবেল। ১৭ রানে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন জারমিন ব্ল্যাকউড।
জয়ের জন্য এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩৫ রান। হাতে আছে দুই দিন, অর্থ্যাৎ ছয়টি সেশন। আর ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের লক্ষ্য দিনের শুরুতেই সাত উইকেট তুলে নেয়া।
ব্যাট হাতে ব্যাটাররা ব্যর্থতার ধারা বজায় রাখলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বল হাতে পারফরম্যান্সটা দুর্দান্তই করেছিলেন টাইগার বোলাররা। এক খালেদ আহমেদই কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন উইন্ডিজ ব্যাটারদের মনে।
উইন্ডিজ শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া খালেদের শুরুটা হয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। বল হাতে এসে নিজের ওভারের প্রথম বলেই ফেরান ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইটকে। ব্যক্তিগত ১ রানে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ধরা দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর সেই ওভারের পঞ্চম বলে খালেদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন পদোন্নতি পাওয়া রেমন রেইফার। চার বলে ২ রান করে তাকেও ফিরতে হয় সোহানের হাতে ধরা দিয়ে। স্বাগতিকরা তখন ৩ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ভাসছে অথৈ সাগরে।
শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের আঘাত হানেন খালেদ। এবারে তার শিকারে সাজঘরের পথ ধরতে হয় এনক্রুমাহ বোনারকে। ছয় বলে রানের দেখা না পেয়েই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
এতে করে ৯ রানেই উইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে আশার আলো দেখায় বাংলাদেশ।
কিন্তু সেই আলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি জন ক্যাম্পবেল ও জারমেইন ব্ল্যাকউডের কল্যাণে। দুইজন মিলে উইকেটের লাগাম টেনে ধরে দলকে এগিয়ে দেন জয়ের বেশ কাছে। দিনশেষে ক্যাম্পবেল অপরাজিত থাকেন ২৮ রানে। আর সঙ্গী হিসেবে থাকা ব্ল্যাকউডের রান ১৭।
এর আগে দুই উইকেটের খরচায় ৫০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে দিনের নবম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। কাইল মায়ার্সের শিকার বনে ১৭ রানে মাঠ ছাড়তে হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে।
ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিঁড়তে পারেননি মুমিনুল হকও। মায়ার্সের দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাত্র ৪ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ফলে ৭৫ রান তুলতে ৪ ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ।
দ্রুত উইকেট পতনের ধাক্কা কাটাতে রানের গতি বাড়ানোর মিশনে নামেন লিটন দাস। জয়কে সঙ্গে নিয়ে দলীয় স্কোর ১০০ রান করেন তিনি। কিন্তু রান বাড়ানোর প্রচেষ্টায় মায়ার্সের হাতে ধরা দিয়ে রোচের প্রথম শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
লিটনের বিদায়ের পর মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার কাঁধে তুলে নেন সাকিব আল হাসান। তবে জয়ের সঙ্গ বেশিক্ষণ পাননি টেস্ট দলপতি। দলীয় ১০৯ রানেই ১৫৩ বল খেলা জয় রোচের দ্বিতীয় শিকার বনে। মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান।
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা বাংলাদেশের পিছু ছাড়েনি দ্বিতীয় ইনিংসে এসেও। তবে উইকেট কামড়ে ধরে নুরুল হাসান সোহনকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় এড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান সাকিব আল হাসান।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগ পর্যন্ত আর কোনো বিপদ না ঘটায় ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরে দেখেশুনে ব্যাট চালাতে থাকেন সাকিব-সোহান। এই দুইজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দুইজনের অবিচ্ছেদ্য ১২৩ রানের জুটিতে ভর করে প্রাথমিক বিপদ এড়ায় বাংলাদেশ দেখা ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কা কাটিয়ে দেখা পায় লিডের।
চলছিল বেশ ভালোই। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে দলীয় ২৩২ রানে সাকিবের ৬৩ রানে বিদায়ের মধ্য দিয়ে। স্কোরশিটে এরপর ছয় রান যোগ করতেই সাজঘরের পথ ধরেন সোহানও। মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৪ রান।
এরপর আর উইন্ডিজের বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি কোনো টাইগার ব্যাটারই। যার ফলে ২৪৫ রানেই থেমে যায় টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংসের চাকা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮৪ রানের।
জেএন/মোরশেদ