স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাবিনা ইয়াসমিন বলেছেন, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ধূমপানের কারণে মানুষ মারাত্বক জঠিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে আয়ুস্কাল। এর পরও ধূমপায়ীরা সচেতন হচ্ছেনা।
অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহণ ও খোলা জায়গায় ধূমপান করা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। বিভিন্ন কারণে আমাদের সন্তানেরা ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপান ও তামাকমুক্ত দেশ গড়তে হবে। এজন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত “ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নে করণীয়” বিষয়ক বিভাগীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সহযোগিতায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সেমিনারের আয়োজন করেন।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিষয়ে যে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সিগারেটের মোড়কে যে সতর্কবাণী দেয়া হয়, সেটা আরো দৃশ্যমান করতে হবে। ধূমপানে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড টাঙানো যাবেনা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২’শ গজের মধ্যে সিগারেট ও তামাক জাতীয় দ্রব্যের দোকান থাকতে পারবেনা। শিক্ষার্থী ও কিশোরদেরকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে পারিবারিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, ২০০৫ সালে সরকার যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রনয়ণ করেন তখন প্রকাশ্যে ধূমপান করলে জরিমানার বিধান ছিল মাত্র ৫০ টাকা, ২০১৩ সালে করা হয় ২’শ টাকা, বর্তমানে প্রকাশ্যে ধূমপানে জরিমানা ৩’শ টাকা। শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দিলে হবেনা।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার রোধে ধূমপান রোধে সর্বত্র সভা, সেমিনারের মাধ্যমে জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে তামাক চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, তামাকজাত এক ধরনের উদ্ভিদ বা ফসল। তামাকের পাতা ও পানি শুধু মানবদেহের ক্ষতি করেনা, মাটির উর্বরতা হ্রাসসহ মৎস্য প্রজাতির ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন প্রয়োজন নেই। সরবরাহ না থাকলে চাহিদা কমে যাবে।
তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার আস্তে আস্তে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জাতিকে সুস্থ-সবল রাখতে হলে ধূমপান থেকে আমাদের সন্তানদের বিরত রাখতে হবে। এজন্য প্রত্যেক অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে।
ধূমপান আর বিষপান সমান। তামাকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকি। ধূমপানের কারণে অনেকে জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ধুমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে ধূমপায়ীর পাশাপাশি অ-ধূমপায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জনমত সৃষ্টি, জনসচেতনতামূলক সভা, এ্যাডভোকেসি মিটিং, প্রেস কনফারেন্স, জনসচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন, মতবিনিময় সভা, সোস্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, ব্যানার স্থাপন, নো-স্মোকিং সাইনেজ বিতরণ এবং ওয়েবিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ জাকির হোসেন খান, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুর রহমান।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া, ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাাহ, ইলমা’র প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, জেলা ক্রীড়া অফিসার হারুণ অর রশিদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আফজারুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুল আবছার ভূঁঞা, ইপসার জেলা সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ওমর শাহেদ, সংবাদ সংস্থা এনএনবি’র ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, জাগো নিউজ’র স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মোঃ ইকবাল হোসেন প্রমূখ।
জেএন/এমআর