‘এডে বিচার অয় জানিলে কোডত ন যাইতাম, আঁরর চেয়ারম্যান বর বালা মানুষ, টেঁয়াগুন লই আঁর আতত তুলি দিইয়ে’।
বলছিলেন মজলিশ খাতুন (৪৫)। লোহাগাড়ার এই নারী গ্রাম আদালতের রায়ে নিজের সন্তোষের কথা জানালেন এভাবেই। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় দেড় বছরেও মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাঁর দায়েরকৃত মামলাটি পাঠানো হয় পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে। সেখানে মাত্র ১৫ দিনেই অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়। ক্ষতিপূরণের তিন হাজার টাকা বুঝে পেয়ে সন্তুষ্টির হাসি ফোটে তাঁর মুখে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক সকালে পদুয়া ইউনিয়নের মজলিশ খাতুনের সাথে তাঁর প্রতিবেশী ফরিদ আহম্মদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফরিদ আহম্মদ মজলিশ খাতুনকে মারধর করেন। পরে মজলিশ খাতুন নালিশ করেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে। সেখানে বিচার না পেয়ে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই তিনি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি ফেরত পাঠান পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে। ২৫ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদ মামলাটি গ্রহণ করে এবং ২ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাদী ও বিবাদী, দুই পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হওয়ার নোটিশ জারি করে। নোটিশের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষই ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন গ্রাম আদালত গঠন করার লক্ষ্যে একই বছরের ৯ নভেম্বর নিজ নিজ পক্ষের ২ জন প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশ দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জহির ওই দিনই পাঁচ সদস্যের গ্রাম আদালত গঠন করে মামলার নথি গ্রাম আদালতে প্রেরণ করেন। পরে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং জেলা আদালত থেকে প্রাপ্ত মামলার নথির শেষ আদেশ পর্যালোচনা করে মজলিস খাতুনকে মারধরের ক্ষতিপূরণ বাবদ তিন হাজার টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় ফরিদ আহম্মদকে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফরিদ আহম্মদ সাত দিনের মধ্যে উক্ত টাকা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেন এবং মজলিস খাতুন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে থেকে টাকা বুঝে নেন।
পদুয়া ইউনিয়ন গ্রাম আদালতের সহকারী মো. জানে আলম বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দীর্ঘসূত্রিতায় ভোগান্তি পোহানোর পর মাত্র ১৫ দিনে গ্রাম আদালতে বিষয়টির সুরাহা হওয়ায় মামলার উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপির অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প দেশের ২৭টি জেলার ১,০৮০টি ইউনিয়নে কাজ করছে। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলার পদুয়াসহ মোট ৪৬টি ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে এবং দ্রুত স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি এবং এর মাধ্যমে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জয়নিউজ/ফারুক/জুলফিকার