মালিক ও তদারকি সংস্থাগুলো বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে যে কনটেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাখা ছিল তাতে ইউএন (জাতিসংঘ) সনদ ছিল না। অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য ডিপোতে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে দায়ী করেছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি।

- Advertisement -

বুধবার(৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে রিপোর্ট হস্তান্তর করেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

- Advertisement -google news follower

তিনি বলেন, বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমরা ১৭ ধরনের নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ঢাকা ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি।

তাতে ওই ডিপোতে অন্য কোনো কেমিক্যালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। হাইড্র্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড নিজে নিজে জ্বলে না এটি ঠিক নয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের এক মাস এক দিন পর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

- Advertisement -islamibank

১৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ২৫৯টি সংযুক্তিপত্র সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও গঠিত তদন্ত কমিটি সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের জন্য ডিপো মালিক ও সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছে।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ৪ জুন দুর্ঘটনার পরদিন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেব। সেখান থেকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনার কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ থেকে উত্তরণে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করেছি। প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সরেজমিনে গেছি এবং কারা এর জন্য দায়ী তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। এ তদন্তকে চূড়ান্ত বলা যাবে না। এ ঘটনায় বৃহত্তর তদন্তও হতে পারে।

প্রতিবেদন সর্ম্পকে জানতে চাইলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমদের তিনটি বিষয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি হলো ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের দুর্ঘটনার প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন। আমরা অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করেছি, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করেছি কারা এর জন্য দায়ী। আমরা ২০টি সুপারিশ করেছি।

তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি, কোনো সফটওয়ার পাইনি। মালিকপক্ষ জানিয়েছে এগুলোর কোনো ব্যাক-আপ ছিল না। কিন্তু আমরা এগুলো রিকভার করার চেষ্টা করেছি। এটা মালিক পক্ষের একটা ব্যর্থতা, কারণ ২০২২ সালে ক্লাউডে বা অন্যত্র কোনো নিরাপদ জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ সেভ থাকবে না এটি আধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে একজন বিদেশি নাগরিকও যেখানে এটির মালিক। এটি মালিক পক্ষের একধরনের ব্যর্থতা অবশ্যই।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, একটি অপডক পরিচালনার জন্য ২৫টির মতো লাইসেন্স নিতে হয়। আমরা সুপারিশ করেছি ২০১৬ সালের অপডক নীতিমালা আছে। অফডকগুলো মনিটরিংয়ের জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং টিম আছে। আমরা বলেছি, ওই কমিটিতে এই ২৫টি সংস্থার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করলে এই কমিটি মিটিং করে সুপারিশ করতে পারবে। কার লাইসেন্স হবে আর কার লাইসেন্স হবে না। এখন কোনো সংস্থা লাইসেন্স দিয়েছে, কোনো সংস্থা লাইসেন্স দেয়নি। এগুলো একটার বিষয়ে অন্যটা জানে না। কারণ এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার কোনো যোগাযোগ নেই।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, যারা ঘটনার সময় সেখানে অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এক পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর বাইরে আল রাজী কেমিক্যালের মালিক, ওই প্রতিষ্ঠানের জিএম (মার্কেটিং) সহ সিঅ্যান্ডএফ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স, শিপিং লাইন এবং বিএম কনটেইনার ডিপোর সঙ্গে জড়িতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ডিপো মনিটরিং এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা প্রতিবেদন নিয়েছি।

গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। দুর্ঘটনার পর মোট ৬টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক করা কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM