বৈশ্বিক মহামারির কারণে টানা দুবছর বিদেশিদের নিয়ে হজ পালন বন্ধ থাকার পর এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ ৬০ হাজার ১৪৬ জন হজ পালন করছেন।
গতকাল বুধবার মক্কা নগরী থেকে মুসল্লিরা আট কিলোমিটার দূরে বাসে করে ও হেঁটে মিনার উদ্দেশে রওনা করেন। এরই মধ্যে হজ পালনের উদ্দেশে দুটুকরো সাদা ইহরাম কাপড় শরীরে পরে তাঁবুর শহর মিনায় সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে আগামীকাল শুক্রবার মক্কার ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ।
বিশ্বের বৃহত্তম তাঁবুর শহর মিনায় আজ হজযাত্রীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন স্ব স্ব তাঁবুতে। তবে, যাঁরা মসজিদে খায়েফ বা কুয়েতি মসজিদের আশপাশে অবস্থান করছেন, তাঁরা সেখানে গিয়ে জামাতেও শরিক হতে পারবেন। হজযাত্রীরা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ কোন পথে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে যাবেন, তার পথনির্দেশিকা অনুসন্ধান ছাড়াও পাশেই অবস্থিত মোয়াইসমে কোরবানির স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন ২৫ নম্বর সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই।
এবার বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বেশির ভাগ তাঁবুর অবস্থান মিনা ওয়াদি হাসপাতালের বাঁ-পাশে, ৬৮ নম্বর কিং ফাহাদ রোড ও ৬২ নম্বর রোডের মাঝামাঝি এলাকায়। এখান থেকে হজযাত্রীদের টিনশেড পথে আসা-যাওয়া অনেকটা সহজ হবে।
এবার আরাফাত ময়দানে পবিত্র হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সউদ এক রাজকীয় ফরমানে এ বছর হজের খুতবার জন্য তাঁকে নিযুক্ত করেন। শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আব্দুল কারিম আল ঈসা বর্তমানে রাবেতা আল আলম আল ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক হেলাল অরগানাইজেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বছরও হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪টি ভাষায় শোনা যাবে। হজের খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন—মোহাম্মদ শোয়াইব রশীদ ও তাঁর সহকারী খলিলুর রহমান। মোহাম্মদ শোয়াইব মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিসের ওপর পিএইচডি করছেন। আর, খলিলুর রহমান একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন।
এরই মধ্যেই আসন্ন হজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে রাজকীয় সৌদিআরব সরকার। এবারের হজেও হাজিদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে মক্কা, মিনা, মোজদালিফা ও আরাফাত ময়দানে হাজিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন।
নারী নিরাপত্তাকর্মীরা হাজীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন বিতরণ এবং হাজিদের হজের নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেবেন। হজ চলাকালীন হাজীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মেডিকেল টিম কাজ করবে। বৃহস্পতিবার মিনায় অবস্থান করে সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক আরাফাতের উদ্দেশে হাজিরা রওনা হবেন। আরাফাতে পৌঁছার পর জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেবেন এবং সেখানে রাতে অবস্থান করবেন। পথে শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য হাজিরা পাথর সংগ্রহ করবেন।
এ বছর হজের এ বিশাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্তমানে মিনায় বাংলাদেশ থেকে আগত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মক্কা বাংলাদেশ হজ অফিসের হজ কাউন্সিলর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামসহ প্রতিনিধি দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এদিকে, ৬০ হাজার বাংলাদেশি হজযাত্রীর জন্য ৩০ সদস্যবিশিষ্ট প্রশাসনিক দল, ১৩২ জন সহায়তাকারী, ১৪০ জন হজকর্মী, কারিগরি বিষয়ক ৫৪ জন, ১৭ জন আইটি বিশেষজ্ঞ এবং মৌসুমি হজ তিন জন সার্বক্ষণিক হাজিদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
এবার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ সম্পন্ন হবে বলেই মনে করছেন হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
জেএন/এমআর