ডিবি পরিচয় দিয়ে গত রোববার গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় থাকা এক স্বর্ণ দোকানের কর্মচারীর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে একটি চক্রটি। আর এই চক্রটিতে রয়েছেন পুলিশের কয়েকজন সদস্য। ঢাকায় স্বর্ণ ছিনতাইয়ের এই চক্রটি রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় জাহিদুলকে গ্রেপ্তারের পর চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। চক্রে আরও কোনো পুলিশ সদস্যর সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য এরইমধ্যে রূপনগর থানার এসআই মাসুদুর রহমানকে (মাসুদ) থানা থেকে ক্লোজ করে মিরপুর উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাহিদুলকে ঢাকার আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে পায় দারুস সালাম থানা পুলিশ। এর আগে সোমবার তাঁকে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি রূপনগর থানার ‘হোন্ডা টহল টিম’-এর সদস্য ছিলেন। স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরও দুজনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করেছে বলে জানা গেছে। তবে দুজনের আটকের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করেননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই বায়েজীদ মোল্লা বলেন, সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ জাহিদুলকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাঁকে।
এর আগে ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা স্বর্ণ ছিনতাইয়ে এএসআই জাহিদুলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের শিকার স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী টিটু প্রধানিয়ার দায়ের করা মামলার এজাহারে দেওয়া মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) যাচাই করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মোটরসাইকেলটি জাহিদুলের। এরপরই তাঁকে রোববার সন্ধ্যায় রূপনগর থানা থেকে ক্লোজ করে মিরপুর উপপুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের সময় এএসআই জাহিদুল নিজের মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্টো ল-৫৬-৬৪৩৮) ব্যবহার করেন। থানায় নেওয়ার নামে স্বর্ণ দোকানের কর্মচারী টিটুকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে গাবতলী বেড়িবাঁধে নেওয়া হয়। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন এএসআই জাহিদুল নিজেই। পরে টিটুর কাছে থাকা ৩৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারের ধানসিঁড়ি চেইন অ্যান্ড বল হাউজ নামের স্বর্ণের দোকানে চাকরি করেন টিটু। তিনি জানান, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জুয়েলারির অর্ডার করা স্বর্ণের গহনা তিনি পৌঁছে দেন। রোববার সকালে তিনি তাঁতিবাজারের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুল ব্যাগে ৩৮ ভরি ১৪ আনা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাচ্ছিলেন টাঙ্গাইল জেলায়। সকাল পৌনে ৮টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে টাঙ্গাইলের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
এ সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ডিবি পরিচয় দিয়ে তার ব্যাগে কী আছে জানতে চান। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরও ৪-৫ জন এসে যোগ হয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে। এক পর্যায়ে টিটুর কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার থাকা ব্যগটি ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে মোটরসাইকেলে তোলা হয়। থানায় নেওয়ার নামে প্রথমে তাঁকে নেওয়া হয় গাবতলী বেড়িবাঁধে।
এরপর তেজগাঁও থানায় নেওয়ার নামে সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠানো হয় তাকে। তাতে চক্রের আরও এক সদস্য উঠেন। অটোরিকশাটি বিজয় সরণিতে এসে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়ে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তি অটোরিকশা থেকে নেমে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রোববার রাতে দারুস সালাম থানায় মামলা করেন। আসামি করা হয় অজ্ঞাতনামাদের। এজাহারে ওই মোটরসাইকেলের নম্বর সংযুক্ত করা হয়। মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুলকে শনাক্ত করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ধানসিঁড়ি চেইন অ্যান্ড বল হাউজের মালিক সঞ্জয় মজুমদার বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশ থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে। সেই ফুটেজ টিটুসহ তাঁকে দেখানো হয়েছিল। তাতে এএসআই জাহিদুলকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জাহিদুল টিটুকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে বেড়িবাঁধের দিকে চলে যান। ছিনতাই হওয়া স্বর্ণালঙ্কার ফেরত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় মজুমদার।
জানা গেছে, রূপনগর থানা পুলিশের ‘হোন্ডা টহল টিম’ নামে একাধিক টিমের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিতেন এসআই মাসুদুর রহমান। এএসআই জাহিদুল তার টিমের সদস্য ছিলেন। রূপনগর থানার হোন্ডা টহল টিমের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসআই মাসুদ পুলিশের সন্দেহের তালিকায় আছেন। যে কারণে তাকে রোববার রাতে থানা থেকে ক্লোজ করে ডিসি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জেএন/এএম