শেষ ৫ ওভারে জিম্বাবুয়ে নেয় ৭৭ রান। বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬৬। অধিনায়ক সোহানের ব্যাট আশা জাগালেও যোগ্য সঙ্গীর অভাবে ১৭ রানের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো টাইগারদের।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৮৮ রানে। এতে ১৭ রানের জয়ে সিরিজের এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। আরো একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মিশনে নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে নেমে আরো একটি পরাজয়ের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ দল।
হারারেতে শনিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার বোলারদের এলোমেলো বোলিং আর ফিল্ডারদের হাত ফসকানো ফিল্ডিংয়ে ৩ উইকেটে ২০৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। যা বাংলাদেশের তাদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান।
বিশাল ওই লক্ষ্য ছুঁতে গিয়ে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রানে থামে সোহানের দল। ১৭ রানের জয় নিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ওপেনার রেগিস চাকাভাকে ফেরান বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
স্টাম্প বরাবর ফুলার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মেরেছিলেন চাকাভা। কিন্তু সেটি মিডউইকেটে তালুবন্দি করেন নাজমুল হোসেন। ১১ বলে ৮ রান করেন চাকাভা।
পাওয়ার-প্লেতে ৪৩ রান তোলা স্বাগতিকরা সপ্তম ওভারের প্রথম বলে হারায় আরেক ওপেনার ক্রেইগ আরভিনকে। মোসাদ্দেকের কুইকার ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে গিয়ে অন সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন আরভিন।
কিন্তু বল ব্যাট মিস করে ভেঙে দেয় উইকেট। ১৮ বলে ২১ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে ওয়েসলে মাধেভেরে ও শন উইলিয়ামস ৩৭ বলে গড়েন ৫৬ রানের পার্টনারশিপ।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলা উইলিয়ামসকে থামান মুস্তাফিজ। ৪ চার ও ১ ছয়ে ১৯ বলে ৩৩ রান করেন এই তিনি। ৯৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সিকান্দার রাজাকে নিয়ে ব্যাট চালিয়ে ঝড় অব্যাহত রাখেন মধেভেরে। ৬ চারে ৩৭ বলে অর্ধশতক তুলে নেন তিনি।
কম যাননি রাজাও, আরো বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় চার-ছয়ের ফুলঝুরি সাজিয়ে বসেন। ৫ চার ও ৩ ছয়ে মাত্র ২৩ বলে ফিফটির কোটা পূর্ণ করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
শেষ ওভারে ৪৬ বলে ৬৭ রানের সময় চোট নিয়ে উঠে যান মাধেভেরে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ২৬ বলে ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন রাজা। যেখানে ৭টি চার ও ৪টি ছয় মারেন তিনি। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২০৫ রানের পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে।
হতশ্রী বোলিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে ৫০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন পেসার মুস্তাফিজ। সমান ৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য তাসকিন আহমেদ।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া এই তরুণ পয়েন্টে ক্যাচ দেন। ৮ বলে ৪ রান করেন তিনি।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে লিটন দাস আর এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ৬০ রান তোলে সফরকারীরা। তবে এই দুইজন তালগোল পাকিয়ে বসেন ইনিংসের সপ্তম ওভারে।
উইলিয়ামসের বলে শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ দেন লিটন। কিন্তু উদযাপন করতে গিয়ে ফেলে দেন এনগ্রাভা। লিটন না বুঝে হাঁটা দেন ড্রেসিংরুমের দিকে। এদিকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে উইলিয়ামসকে বল পাঠিয়ে দেন এনগ্রাভা। সঙ্গে সঙ্গে উইকেট ভেঙে দেন উইলিয়ামস।
নানা নাটকীয়তার পর আউট দেন টিভি আম্পায়ার। নিজের ভুলে রানআউটের আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। ৬ চারে ১৯ বলে ৩২ রান করে ফেরেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা বিজয়ই যেন এদিন দলকে ডুবিয়ে দিলেন! ২৭ বল খেলে ২৬ রান করে আউট হন তিনি। তার ওয়ানডে ঘারানার ব্যাটিংয়ে আরো চাপে পড়ে দল। পাঁচে নামা আফিফ হোসেন দ্রুত রান তুলতে গিতে ফেরেন ৮ বলে ১০ রানে।
তবে একপ্রান্ত আগলে খেলেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত, সোহানে সঙ্গে ২১ বলে ৪০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে খেলায় রাখেন তিনি। ইনিংসের ১৬তম ওভারে থামে শান্তর ব্যাট। ৩ চার, ১ ছয়ে ২৫ বলে করেন ৩৭ রান।
১৬ ওভারে ১৪৬ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য ২৪ বলে প্রয়োজন ৬০ রান। সে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিজ ব্যাটে ঝড় তুলে খানিক আশার সঞ্চার জোগান সোহান।
তবে মোসাদ্দেক হোসেন ১০ বলে ১৩ রান করে আউট হলে কাজে আসেনি নতুন অধিনায়কের ২৬ বলে অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংসটি। ১টি চার ও ৪টি ছয়ে সাজানোর সোহানের এই ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
জিম্বাবুয়ে- ২০৫/৩ (২০ ওভার) (আরভিন ২১, চাকাভা ৮, মাধেভেরে ৬৭*, উইলিয়ামস ৩৩, রাজা ৬৫*; মুস্তাফিজ ২/৫০, মোসাদ্দেক ১/২১)
বাংলাদেশ- ১৮৮/৬ (২০ ওভার) (লিটন ৩২, বিজয় ২৬, শান্ত ৩৭, সোহান ৪২*; জংউই ২/৩৪, মাসাকাদজা ১/২৩)
জেএন/পিআর