দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ‘বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক ৩০ জুলাই সকালে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। সিসিসিআই রিসার্চ ডেভেলাপমেন্ট ট্রেনিং সাব-কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমিতে বিভিন্ন খাতে সম্ভাবনাসমূহ চিহ্নিতকরণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক নৌ-প্রধান ও বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন (বিএমএফএ)’র প্রথম সহ-সভাপতি ভাইস এডমিরাল (অব.) জহিরুল উদ্দিন আহমেদ, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী (খোকা), চিটাগাং চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ, রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ, প্রান্তিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. গোলাম সারওয়ার, কেএসআরএম গ্রুপের উপ -ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেম্বার পরিচালক মো. শাহরিয়ার জাহান। আরো বক্তব্য রাখেন সিসিসিআই রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং সাব-কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন ও কনভেনর মো. সালাউদ্দিন ইউসুফ, মিডিয়া পার্টনার দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’র চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ শামসুদ্দিন ইলিয়াছ ও দৈনিক বণিক বার্তা’র চট্টগ্রাম ব্যুরো চীফ রাশেদ এইচ চৌধুরী।
অন্যদের মধ্যে চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), অঞ্জন শেখর দাশ, মো. ওমর ফারুক, মো. ইফতেখার ফয়সাল, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, তানভীর মোস্তফা চৌধুরী, সাব-কমিটির জয়েন্ট কনভেনর ইঞ্জিনিয়ার এসএম শহীদুল আলম, সদস্য আকিব কামাল, আরিফ ইফতেখার মাহমুদ ও মো. আবু হোরায়রা প্রমুখ গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রায় ৭১০ কি.মি. দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চলসহ ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বৈচিত্র্য ও সম্পদে পূর্ণ বিশাল জলসীমা বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিকে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। এ সকল সম্ভাবনার অধিকাংশই এখনো উন্মোচিত হয়নি এবং এ বিষয়টি উপলব্ধি করে আমাদের সরকার ভিশন ২০৪১ এ ‘পারস্পেক্টিভ প্ল্যান অফ বাংলাদেশ ২০২১-২০৪১ ( পিপি ২০৪১) অন ব্লু ইকোনমি’ নামে একটি নির্দিষ্ট চ্যাপ্টার অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই লক্ষ্যে যথাযথ প্রণোদনা ও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নীতিমালা ও কৌশলগত কাঠামো জরুরি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম সভায় ব্লু ইকোনমির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং কিছু সুপারিশ পেশ করেন। এর মধ্যে রয়েছে : চিটাগাং চেম্বার ব্লু ইকোনমির ওপর একটি আরএন্ডডি সেল গঠন করতে পারে যা ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনের বাস্তবায়ানযোগ্য প্রকল্পসমূহ চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এই সেল পোর্ট এন্ড শিপিং-এর বিভিন্ন সাব গ্রুপের সাথে পোর্ট এন্ড মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করবে। ব্লু ইকোনমি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বতর্মান শিপিং পলিসিকে আরো যুগোপযোগী করে তুলতে সরকারকে প্রস্তাবনা প্রদান। মেরিটাইম ট্রেডকে প্রমোট করতে অংশীজনদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রাইভেট পোর্ট পলিসি তৈরিতে চেম্বার সরকারকে প্রস্তাবনা দিতে পারে। রাজধানীর কাছাকাছি পিপিপি’র আওতায় আইসিডি নির্মাণে চেম্বার প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর থেকে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী বন্দরের সাথে সড়ক, নৌ ও রেলপথ সংযোগ স্থাপন করা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে চকরিয়ার কাছাকাছি আইসিডি নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা ইত্যাদি।
সাবেক নৌ-প্রধান ও বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশন (বিএমএফএ)’র প্রথম সহ-সভাপতি ভাইস এডমিরাল (অব.) জহিরুল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিঙ্গাপুর, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলো সমুদ্রকে ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে এখনো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে উঠছি না। কারণ পর্যাপ্ত তথ্য ও গবেষণা না থাকায় এ খাতে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা বিক্রয় করার ক্ষেত্রেও ভ্যালুয়েশন করা যাচ্ছে না। তাই এ সেক্টরে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করলে তা রিটার্ন আসবে সেই বিষয়ে নেই কোন উল্লেখযোগ্য গবেষণা। এছাড়া টুনা মাছ বিশ্বব্যাপী চাহিদা থাকলেও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই মাছ আহরণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী (খোকা) উপকূলীয় অঞ্চলনির্ভর মাল্টিডাইমেনশনাল ট্যুরিজম উন্নয়ন, ব্যবসায়ীদের জন্য অনবোট ফিশ প্রিজার্ভেশন ও অর্গানিক ড্রাইফিশ প্রসেসিং এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, কোস্টাল লাইনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা, ৬০-৭০ নটিকেল মাইলের অধিক গভীরে গিয়ে মাছ শিকারের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জেলেদের ভর্তুকি প্রদান করা, খাতভিত্তিক নীতিমালা ও ৩-৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ব্লু ডাটা ব্যাংক ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস পয়েন্ট চালু করার সুপারিশ করেন।
চিটাগাং চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে ফ্রেইট ও অন্যান্য চার্জ বাবদ প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নৌপথগুলোকে কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ তহবিল প্রয়োজন। তাই ব্লু ইকোনমিতে বিনিয়োগের অর্থ সংস্থানের জন্যও নীতিমালা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। এই নৌপথকে নেভিগেশনের আওতায় আনা গেলে সড়ক পরিবহনের ওপর যেমন চাপ কমবে তেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। একটি মাত্র সেল দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য একটি মন্ত্রণালয় গঠন করে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে কাজগুলো করতে হবে। বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ব্লু ইকোনমির ফসল। কিন্তু বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সব কাজ দেওয়া হচ্ছে বিদেশিদের। যদি এসব কাজ দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে করা যেত তাহলে সব টাকা দেশেই থাকত। এসব বিষয়গুলো সরাসরি ব্লু ইকোনমির সাথে জড়িত। আমাদের ব্লু ইকোনমিকে কাজে লাগাতে হলে ৫-১০ বছরের প্রায়রিটি প্রজেক্ট গ্রহণ করতে হবে।
জেএন/কেকে