চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা রাজ ও পরি নামক বাঘ দম্পতি থেকে ৪ টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ শাবক জন্ম নিয়েছে। বাঘ শাবকগুলোর নাম দেয়া হয়েছে-পদ্মা, মেঘনা, হালদা ও সাঙ্গু। একই দম্পতির ঘরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রথম সাদা বাঘটি পর্যটকদের জন্য বিশেষ একটি আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটি দেখতে ভিড় করছে। এ চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৬ টি বাঘ রয়েছে, তন্মধ্যে ৫ টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ যা একটি অনন্য নজির। বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা ও সাফারী পার্কের মধ্যে সব চেয়ে বেশী বাঘ এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। এছাড়া চিড়িয়াখানায় গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক এভিয়ারি (পক্ষীশালা) যেখানে ৩ শতাধিক পাখি রয়েছে। এ চিড়িয়াখানা আরও যুগোপযোগী করতে নানান পরিকল্পনা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সদ্য জন্ম নেয়া ৪টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ শাবক, চিড়িয়াখানার বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে আজ ১ আগস্ট সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় চিড়িয়াখানার কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হয়িদার চৌধুরী বাবুল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোঃ বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আবু রায়হান দোলন, এনডিসি মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ উমর ফারুক, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের উদ্যোগে ও জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা ৫ একর (বর্তমানে ১০.২ একর) জমির উপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় এর মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম জেলার মানুষের জন্য একটি চিড়িয়াখানা তৈরী তথা বিনোদনের ব্যবস্থা করা। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে জেলার একমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কোনো ধরণের সরকারি অনুদান ব্যতিরেকেই জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় এ চিড়িয়াখানা একটি স্বাবলম্বী এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
ডিসি বলেন, জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে চিড়িয়াখানার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুশাসনের ক্ষেত্রে একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। চিড়িয়াখানার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ ও জেব্রা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে-ভল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘদাশ, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া, বক ও টিয়াসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার কারণে ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।
মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং নতুন নতুন প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে চিড়িয়াখানায় দর্শক সমাগম হচ্ছে ও প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অনুদান কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনুদান ছাড়া শুধুমাত্র টিকেট বিক্রির টাকা দিয়ে চিড়িয়াখানার সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ, পশু-পাখির খাদ্য ব্যয়, ঔষধ ও পরিচর্যা ব্যয়, প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহ বাবদ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন নির্বাহ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সার্বক্ষনিক সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় অভ্যন্তরে সার্বক্ষনিক আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার পরেও জেলা প্রশাসনের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে চিড়িয়াখানার চলতি তহবিলে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা রয়েছে। এছাড়া এফডিআর হিসাবে আরও ২ কোটি টাকা রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এই মাসেই চালু হতে চলছে।
ডিসি ও চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণেও পাহাড়ি জায়গায় বৃক্ষরোপণ (ফলজ, ফুলজ ও উদ্ভিজ) করে চিড়িয়াখানার পরিবেশগত সৌন্দর্য ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে ডিম থেকে অজগরের বাচ্চা ফুটানো হয় এবং গত ২২ জুন তারিখে র্সবশষে ১১টি বাচ্চা কৃত্রিমভাবে ফুটে যা অতি শীঘ্রই বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আবদ্ধ পরিবেশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চিতা বিড়ালের বাচ্চা প্রজনন করানো সম্ভব হয়। এছাড়া দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, জার্নালে প্রাণি গবেষাণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিতভাবে বিনামূল্যে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনের সুব্যবস্থা করছে।
এসময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শুভ আগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রাণি শিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম (ক্লাস সেশন, সেমিনার, ওয়ার্কশপ প্রভৃতি) আয়োজন করছে। এর মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও তরুণরা প্রাণিজগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করছে।
জেএন/কেকে