গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি কখনো বিপদ সীমার ওপর দিয়ে আবার কখনো বিপদসীমার নিচে নেমে আসলেও তিস্তা নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দিন যতই যাচ্ছে ভাঙনের গতি ততই বেড়েই চলছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে বিলীন হতে শুরু করেছে স্কুল,বসতভিটা ও আবাদী জমি।
কৃষকদের চোখের সামনেই একে একে তাদের আবাদী জমিগুলো নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। সোমবার থেকে হঠাৎ করে নতুন ভাবে তিস্তার ভাঙ্গন শুরু হয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্ট বাজার গ্রামের সোলেমান মিয়া জানান, শেষ পর্যন্ত রক্ষা হল না বাপ-দাদার ১০০ বছরের পুরাতন বসতভিটা। চলে গেল তিস্তার গর্ভে।
তিনি বলেন সরকারকে দোষ দিয়ে কি করব। সব দোষ আমাদের কপালের। সবাই আসে দেখে যায়, আর ফিরে আসে না।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়য়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ভাঙন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। গত ১৫দিন ধরে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্ট বাজার ও চরমাদারী পাড়া এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে।
এতে করে ১০০ পরিবারের বসতবাড়ি, ১ কিলোমিটার রাস্তা, ২০০ হেক্টর ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকায় ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজারও বসতবাড়ি, ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি ও ২ কিলোমিটার রাস্তা।
ডাঙার চর গ্রামের জরিপ উদ্দিন জানান, চরের মানুষজনকে দেখার কেউ নাই। প্রতিবছর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে হাজারও পরিবার বাপ-দাদার ভিটা মাটি ছেড়ে অন্য জেলায় গিয়ে দিন মজুরের কাজ করছে।
অনেকে চরের মধ্যে এপিট ওপিট করে চালাঘর তুলে বসবাস করছে। ভাঙনের শিকার পরিবাগুলোর মানবেতর জীবন যাপনে সকলের সহযোগিতা দরকার।
হরিপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম জানান, তিস্তার চরের মানুষ আমি। আমি জানি বসত বাড়ি ভাঙনের কষ্ট। গত ২৭ জুলাই চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছি জনগণের সেবা করার প্রত্যয় নিয়ে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, গত ১৫দিনের ভাঙনে হরিপুরের কারেন্ট বাজার, চরমাদারী পাড়া গ্রামে ১০০ পরিবারের বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো মানবের জীবন যাপন করছে। তিনি নদী ভাঙনের তালিকা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিকট পাঠিছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, হরিপুরের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। চেয়ারম্যান ও নেম্বারদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০০ পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে হাজারও বসতবাড়ি।
তিনি বলেন এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ভাঙ্গন কবলিতদের তালিকা প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকায় জিও টিউব ও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
তিস্তার ভাঙ্গনে প্রতিবছর প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় দাবি বিশ্লেষকদের। ভাঙ্গনরোধে মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চান তিস্তাপাড়ের মানুষ।
জেএন/পিআর