চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ সালাম বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে তাঁর নেতৃত্বে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হতো না। খুনি জিয়া-মোস্তাক-মেজর ডালিমসহ এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম নারকীয় হত্যাকান্ড আর ঘটেনি। কিন্তু নতুন প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানেনা বলে তারা বিপথে ধাবিত হচ্ছে। তাদেরকে সঠিক ইতিহাস জানাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।
আজ সোমবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিট কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চত্ত্বরে আয়োজিত ৪র্থ দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সাহাবউদ্দিন মজুমদার রচিত ‘বাঙালা হতে বাংলাদেশ’ বিষয়ক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তিনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের দৃশ্যনীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের ১৩ বছরের শাসনামলে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের উপযুক্ত বিচার হয়েছে। যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মদদ দিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে শামিল হতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কোন শেষ নেই। তিনি অত্যন্ত দুরদর্শী নেতা ছিলেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন। যে ব্যক্তি আজীবন দেশের স্বাধীনতা ও এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করে গেছেন তাঁকেই সপরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। এ বর্বরতম হত্যাকান্ডের পর ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। জাতির পিতা হত্যাকারী, মদদদাতা ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সমস্ত ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সরোয়ার কামাল দুলুর সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ সালাম। প্রধান বক্তা ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, চন্দনাইশ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরো, হাটহাজারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল আলম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজীশ ইমরান, জেলা কমিটির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মশিউজ্জামান সিদ্দিকঅী পাভেল ও সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিট কমান্ডের অধীন সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল ৯ আগস্টের কর্মসূচীঃ আগামীকাল ৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। প্রধান বক্তা থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ।
জেএন/কেকে