সৃষ্টি দে,বিশেষ প্রতিবেদন : দূর্গম পাহাড়ী জায়গায় গড়ে তুলেছে বিদেশী ফলের বাগান। এ বিশাল বাগান করতে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে মিরসরাই উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা জোহরা এগ্রো ফার্মস এন্ড নার্সারীর স্বত্বাধিকারী ওমর শরীফকে।
নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকাকালীন কৃষি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক পড়তে পড়তে শখ করে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে পথচলা শরীফের। ২০০২ সালে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।
স্কুল জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নেরর লক্ষে ৭৫ একর জায়গায় দেশী/ বিদেশী ফলের চারা রোপন করার জন্য কাজ শুধু করেন ২০০৩ সালে। ২০১৭ সালে কোন সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে বাগান কে সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত করেন তিনি।
বর্তমানে সে দেশী বিদেশী ফল বাজারজাত করার পাশাপাশি এসব ফলগুলোর বীজ থেকে ও গাছ কলমের মাধ্যমে তার একটি বিশাল নার্সারী তৈরি হয়েছে।
সেই নার্সারী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ চারা গাছ ও কলম বানিজ্যিক ভাবে সরবরাহ করছে বাগান প্রেমী উৎসাহিত বিভিন্ন উদ্যোক্তার মাঝে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক উদ্যোক্তার কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
প্রতিদিন বাগান এবং নার্সারী থেকে বীজ ও কলম গাছ সংগ্রহ করছেন নতুন নতুন গাছ প্রেমীরা। জোহরা ফার্মস এর স্বত্বাধিকারী ওমর শরীফ থেকে অনেকেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তার বাগানের পাশে আরো কয়েক জন উদ্যোক্তা বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্ঠা করছেন এবং বেকার যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তারা।
কিভাবে যাবেন ওমর শরীফের সেই প্রতিষ্ঠান জোহরা ফার্মসে : চট্টগ্রাম নগরীর সিটি গেইট থেকে ৫১ কিঃ মিঃ দুরে মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ার হাট পৌরসভা।
সেখান থেকে পূর্ব দিকে রামগড় সড়ক হয়ে দীর্ঘ ২০ কিঃ মিঃ দুরে রামগড়, ফটিকছড়ি ও মিরসরাই অঞ্চলের সীমান্তবর্তী পাহাড়ী অঞ্চল। দুর্গম পাহাড়ের তলদেশে উচু নিচু টিলায় গড়ে উঠেছে দেশী বিদেশী সেই ফলের বাগানটি।
উচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা আর ছোট ছোট ছড়াগুলো দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রায় ৪ কিঃ মিঃ পথ যেতে হয় জোহরা ফার্মস এর বাগানে। বর্তমানে এ বাগানে ছোট বড় ৩টি দেশী বিদেশী ফলের বাগান ও ১টি বীজ ও কলম গাছের নার্সারী রয়েছে।
বাগানের উদ্দ্যেক্তা শরীফের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ৫ পাঁচ শত বার্মিজ রামগই প্রজাতির আম গাছ লাগানোর মাধ্যমে তার পথচলা শুরু। বর্তমানে তার বাগান ও নার্সারীতে রয়েছে বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা দেশী ফলের চেয়েও বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির আমসহ বিভিন্ন ফলের চারা গাছ ।
বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে একশটি থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই আম গাছ, ৫শত থাইল্যান্ডি চাকাপাত আম গাছ, এক হাজার থাইল্যান্ডি ব্যানানা আম গাছ, দেড় শত ভিয়েতনামের কিউজাই আম গাছ, একশত জাপানি মিয়াজাকি আম গাছ, বার শত পিজ থাইল্যান্ডের বারমাসী কাটিমন আম গাছ, ৫০ পিজ পাকিস্তানী আলফানসু আম গাছ, ৫০টি থাইল্যান্ডি হানিডিউ আম গাছ, ১০টি আমেরিকান ক্যান আম গাছ, ৫০টি মিশরের পারফেল আম গাছ, পাঁচশত দেশীয় বারিফোর, পাঁচশত গৌরমতি, পাঁচশত বারী এগার, দেড় হাজার আমরুপালি, তিনশত আর্শিনা, একশটি থ্রি টেস্ট, দুইশটি হাড়িভাঙ্গা আম গাছ।
তাছাড়া আরো রয়েছে পাঁচশটি চায়না লিচু, দুইশটি থাইল্যান্ডের জাম্বুরা, দুইশটি থাইল্যান্ডি সফদা, একশটি আমলকী, তিনশটি লটকন, বিশটি মিষ্টি আমড়া, দুইশটি বেল, দুইশটি থাইল্যান্ডি শরিফা, ৫০টি ইন্দোনেশিয়ান এভাকাডো ফল গাছ, একশটি মালশিয়ান রামবুটান ফল গাছ, তিন হাজার বারী ওয়ান মাল্টা গাছ, একশটি চাইনা কমলা, পাঁচশটি ভারতের দার্জিলিং কমলা গাছ, দুই হাজারটি কাজু বাদাম গাছ।
ওমর শরীফ জয় নিউজকে জানান, এ সকল ফলজ গাছগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ গাছ পরিপূর্ণ ফল দেওয়া শুরু করেছে। আশা করছি অতীতের লোকসান কাটিয়ে, সম্পূর্ণ ভাবে লাভবান হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সমগ্র দেশে এ সকল বিদেশি ফলের চারাগাছ ছোট বড় উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে দেশী বিদেশী ফলের চাহিদা পূরণ করা এবং বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য খালি জায়গায় কৃষি উপযোগী করে ফলজ বাগানের দিকে উৎসাহিত করা।
ওমর শরীফ গত ২ মাস আগে নেদারল্যান্ডসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ সফর করেছেন শুধু বিদেশী কৃষি খামারগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা দেখে আরো নতুন নতুন কিছু শিখতে।
তিনি বলেন, যদি আমাদের দেশে আমাদের মত কৃষি খামার, ফলজ ও বনজ গাছ বাগানের উদ্যোক্তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বা সহযোগিতা করেন, তাহলে এদেশের যুবকরা বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পাবে এবং দেশও সয়ংসম্পূর্ণ কৃষি সম্পদে পরিপূর্ণ হবে।
তবে এখনো পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা পাননি। এমনকি কৃষি অধিদপ্তরের কোন প্রকার সহযোগিতাও তিনি পায়নি।
আগামীতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার হাত বাড়িয়ে আমাদের এই দুর্গম পাহাড়ী বাগানগুলোতে যাতায়াতের সড়ক ও পরিবহন উপযোগী করা এবং কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে সহযোগিতার দাবী জানিয়েছে এ উদ্দ্যেক্তা।
জেএন/পিআর