জনসনের বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ ঘোষণা

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার। তবে এই পাউডারে সম্ভাব্য ক্ষতিকারক উপাদান নিয়ে আগেই বিশ্বজুড়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এর জেরেই এবার বিশ্বজুড়ে ট্যালক-ভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জনসন অ্যান্ড জনসন।

- Advertisement -

ওষুধ প্রস্তুতকারক এই সংস্থাটি বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বলেছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ট্যালক-ভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ করবে জনসন অ্যান্ড জনসন। শুক্রবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

- Advertisement -google news follower

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার ভোক্তা নিজেদের সুরক্ষায় মামলা দায়ের করার পর ২০২০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আর এর দুই বছরেরও বেশি সময় পর এবার ২০২৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এই পণ্যটি বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো।

বৃহস্পতিবার জনসন অ্যান্ড জনসন জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী পোর্টফোলিও মূল্যায়নের অংশ হিসাবে আমরা সকল কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডার পোর্টফোলিওতে রূপান্তর করার বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংস্থাটি আরও বলেছে, কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডার ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করা হয়েছে।

- Advertisement -islamibank

এর আগে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ট্যালক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল জনসন অ্যান্ড জনসন। সেসময় কারণ হিসেবে সংস্থাটি জানায়, আইনি চ্যালেঞ্জের বাধার মধ্যে পণ্যটির নিরাপত্তা সম্পর্কে ‘ভুল তথ্য’ ছড়িয়ে পড়ার কারণে চাহিদা কমে গেছে।

রয়টার্স বলছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডারে ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের ফলে এই উপাদান থেকে হতে পারে প্রাণঘাতী ক্যান্সার। মূলত এই কারণেই কোম্পানিটি ভোক্তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩৮ হাজার মামলার সম্মুখীন হয়েছে।

এছাড়া ভোক্তাদের মধ্যে বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, জনসনের ট্যালক পণ্যে থাকা অ্যাসবেস্টসের মাধ্যমে দূষণের কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে। অ্যাসবেস্টস মূলত কার্সিনোজেন নামে পরিচিত। মূলত অ্যাসবেস্টস থেকে নানা ধরনের ক্যান্সার হয়। তাই অ্যাসবেস্টসকে বলা হয় ‘কার্সিনোজেন’।

অবশ্য জনসন অ্যান্ড জনসন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কয়েক দশকের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দেওয়া অনুমোদন তাদের ট্যালক পণ্যকে নিরাপদ এবং অ্যাসবেস্টস-মুক্ত বলে প্রমাণ করেছে। বৃহস্পতিবারও প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিবৃতিতে ফের এটিই পুনর্ব্যক্ত করে এবং পণ্যটি বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়।

২০১৮ সালে রয়টার্সের তদন্তে দেখা যায় যে, নিজেদের ট্যালক পণ্যগুলোতে যে অ্যাসবেস্টস বা কার্সিনোজেন রয়েছে তা কয়েক দশক ধরে জানতো জনসন অ্যান্ড জনসন। এছাড়া কোম্পানির অভ্যন্তরীণ রেকর্ড, ট্রায়াল সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণও পাওয়া গেছে যে, অন্ততপক্ষে ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ এর দশকের প্রথম দিকে পর্যন্ত জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালক পণ্যের কাঁচামাল এবং ফিনিশড পাউডারে করা পরীক্ষায় কখনও কখনও অল্প পরিমাণে হলেও অ্যাসবেস্টস শনাক্ত হয়েছিল।

অন্যদিকে মিডিয়া রিপোর্টে, আদালতের সামনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ক্যাপিটল হিলে উপস্থাপিত অ্যাসবেস্টস দূষণের প্রমাণের প্রতিক্রিয়ায় জনসন অ্যান্ড জনসন বারবার বলেছে যে, তাদের ট্যালক পণ্যগুলো নিরাপদ এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে না।

রয়টার্স বলছে, ১৮৯৪ সালে বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে জনসনের বেবি পাউডার মূলত এই কোম্পানির পরিবার-বান্ধব ভাবমূর্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। তবে জনসনের বেবি পাউডারে ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতির বিষয়টি ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম জনসমক্ষে আনে রয়টার্স।

মূলত প্রভাবশালী এই বর্তাসংস্থায় সংবাদ প্রকাশের পরই বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। এতে করে ব্যাপক ধাক্কা খায় জনসনের ব্যবসা। এরই ধারবাহিকতায় শতাব্দী প্রাচীন এই শিশু-দ্রব্যের খ্যাতনামা সংস্থাটির বাজার দর হু হু করে পড়ে যায়।

জেএন/কেকে

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM