নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা থেকে মহাসড়কে ২৫ হাজার ডিমবাহী একটি পিকআপ ভ্যানে ডাকাতির সময় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা ও র্যাব-১১।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি চাপাতি, দুইটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বাস জব্দ করা হয়। এছাড়া ডাকাতির শিকার দুইজন ভিকটিমসহ লুটকৃত পণ্যবাহী বাস উদ্ধার করা হয়।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- ডাকাত চক্রের সরদার মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০) ও মামুন (২৪)।
র্যাব জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা দিনের বেলায় বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরি করতেন আর রাতের বেলা পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তারা যাত্রীবাহী বাস দিয়ে ট্রাক-পিকআপ আটকে এক বছরে অন্তত ৬-৭ বার ডাকাতি করেছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় একটি ডিমবোঝাই পিকআপের গতি রোধ করে র্যাব। পিকআপ থেকে পালানোর সময় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথাবার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তল্লাশি করে একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।
তারা দু’জনই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা একটি বাস চালিয়ে পিকআপের পিছু নেয়। একপর্যায়ে পিকআপটির সামনে রাস্তা আটকে চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিকআপটির নিয়ন্ত্রণে নেয়। চালক ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, পরে ডাকাতদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসটি জব্দ করা হয়। এ সময় বাস থেকে ডাকাতদলের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করাসহ উদ্ধার করা হয় পিকআপের চালক ও সহকারীকে। এ সময় বাসের জানালা ভেঙে ৪/৫ জন ডাকাত পালিয়ে যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ১০/১২ জনের এই গ্রুপটি কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও রাতে তারা পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপে ডাকাতি করে।
চক্রটি মূলত ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তৃতীয় দলটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। এছাড়া, পণ্যবাহী গাড়িটি পরে রং পাল্টে সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়, অথবা গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মূসা ১০-১২ বছর ধরে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। মূসাসহ দলের সবার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার ডাকাতিতে জড়িত হয়।
জেএন/কেকে