মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে রোববার (১৪ আগস্ট) চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, রোববার সকালের দিকে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে ব্যাচেলেটের। এ সফরে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
এ ছাড়া, দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি এবং কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে সরেজমিন মানবাধিকার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের সফরকে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার প্রধান স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবেন কীভাবে মানবাধিকার ঠিক রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা সামনে এগিয়ে নিচ্ছে। চলমান মহামারি সত্ত্বেও দেশে কেউ অনাহারে মারা যায়নি।
তারা আরও বলছেন, মানবাধিকার প্রধান দেখবেন, ১৬৫ মিলিয়নের দেশ বাংলাদেশ গৃহহীনদের প্রায় এক মিলিয়ন বাড়ি দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ১০ মিলিয়নেরও বেশি পরিবার খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ পাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ মানুষের জন্য খাদ্য, বাসস্থান ও উন্নয়নের অধিকার ইত্যাদি মৌলিক মানবাধিকারের প্রচার করছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে শপিংমল, স্কুল বা উপাসনালয়ে কেউ নিহত হচ্ছে না।
তারা বলছেন, জাতীয় প্রেক্ষাপট, বিশেষ করে মহামারি ও অন্যান্য ক্রমবর্ধমান সংকটের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগণের শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ, রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মতো প্রতিবন্ধকতাগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
জানা গেছে, ব্যাচেলেট তার এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের ঢাকা সফর নিয়ে শনিবার সকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ব্যাচেলেটের সফর ঘিরে সরকারের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টির উপলক্ষ হিসেবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কিছু দৃশ্যমান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মানবাধিকার এজেন্ডার রাজনীতিকরণ কখনই জনগণের মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় সাহায্য করে না বরং আন্তরিক সংলাপ এবং সহযোগিতা হলো এর মূল পথ। সুতরাং সরকারের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টির উপলক্ষ হিসেবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কিছু দৃশ্যমান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি দায়িত্বশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য হাইকমিশনারের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার জন্য উন্মুখ।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হাইকমিশনার অবগত রয়েছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের এ সফরে বাংলাদেশের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশীয় আইনি কাঠামো আপডেট করা, সচেতনতা তৈরি করা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে সংবেদনশীল করার মাধ্যমে জনগণের মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারের জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হবে।
জেএন/কেকে