জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে চালের বাজার। দিন যতই যাচ্ছে ততই নিয়ন্ত্রণহীন পড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় এ ভোগ্যপণ্যটির। এমনিতেই উদ্ধমুখী। তার উপর গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
অন্যদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পর চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে এখনো শাকসবজির বাজার অনেকটা চড়া অবস্থায় রয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি, চাক্তাই ও বক্সিরহাট কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির পর দফায় দফায় বাড়ে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। এতে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা হয়ে যায়। এ ছাড়া ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি।
ডিমের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিক্রি কমে যাওয়ায় দামও কমেছে। আজ চট্টগ্রামের বাজারগুলোয় এক ডজন ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গেল সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির দামও আগের সপ্তাহ থেকে কেজিতে ১০ টাকা কমে ২৮০ থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজির দেউরি বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী মানিক সিকদার বলেন, গত সপ্তাহে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমে আজ ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা।
দাম কমলেও ব্রয়ালর মুরগি যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাকে স্বাভাবিক বলছেন না ক্রেতারা। কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা চাকুরিজীবি বেগম রোকেয়া বলেন, ব্রয়ালার মুরগির কেজি ১৭০ টাকা চাচ্ছে। এই দাম কিছুতেই স্বাভাবিক না। ব্রয়ালর মুরগি কেজি দেড়শ টাকার ওপরে হওয়া উচিত না।
তাছাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই দিনে ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা কমেছে। ক্রেতারা বলছেন দাম আরও কমা উচিত। সিন্ডিকেট করে যারা দামে কারসাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে যত অভিযান চলবে দামও দ্রুত কমবে বলে মনে করছেন ব্যাংকার সৌরভ।
এদিকে চাক্তাই কাঁচাবাজারে আসা আবুল কাশেম নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, শুধূ মুরগী নয়, বাজারে চাল,ডিম থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়তি। ২০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে তেমন কিছুই কেনা যায় না। সবকিছুর দাম বাড়ায় আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখতে পায় না।
বক্সিরহাট মুদি দোকানগুলোতে বাজার দর করতে গিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহের চালের বাজার আরো উদ্ধগতি। খুচরায় চালের কেজিতে বেড়েছে দু থেকে তিন টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, পরিবহন খরচ, মজুরি, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ সব মিলিয়ে খরচ আগের তুলনায় আরো বেড়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ কেজি চালের বস্তায় নতুন করে আরো ৫০ টাকা বেড়েছে।
কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা কেজি দরে। ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। টমেটো ও গাজর একশ টাকার উপরে। প্রায় দুশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।
তাছাড়া বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, করলা ৬০, ওলকচু বড় ৫০ টাকা, ছোট ৩০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতিটি ৪০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ২৫ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ধুন্দল ৪০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, কচুরমুখি ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা,পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পুঁইশাক ২০ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
জেএন/পিআর